সংগৃহীত
পাঠ্যপুস্তকে জুলাইয়ের ইতিহাস স্থান দেয়ার নামে জুলাইয়ের ইতিহাসকে শুধু বিকৃত করাই হয়নি বরং নিকট ভবিষ্যতে এই ইতিহাস যাতে সহজে বাদ পড়ে যায় তার ব্যবস্থাও করে রাখা হয়েছে। বলা হয়েছে, আবু সাঈদের খুনি পুলিশ। মুগ্ধ পানি বিতরণ করতে করতে মারা গেছে। কোথাও একবারের জন্যও আওয়ামী লীগ কিংবা ছাত্রলীগের নাম নেয়া হয়নি। কার বিরুদ্ধে এই বিপ্লব হলো তা সম্পুর্ণ হারিয়ে গেছে। এর সাথে জড়িত সাজ্জাদুর রহমান ওরফে রাখাল রাহা গণ বলছে, তারা ঘৃণা ও বিভাজন ছড়াতে চান না। তাই জুলাইয়ের দগদগে ইতিহাসকে এভাবে তুলে ধরেছেন। এ বিষয়ে রাখাল রাহার সাথে সোস্যাল মিডিয়ার একটি প্লাটফর্মে তর্ক বিতর্কের সময় আমি নিচের পয়েন্টগুলো তুলে ধরলেও উনি সরাসরি এর কোন উত্তর দেননি।
আমার বক্তব্য:
১। জুলাইয়ের দগদগে ইতিহাস পাঠ্যপুস্তকে স্থান পেলে শিশুদের মধ্যে ঘৃণা ও বিভাজন ছড়ানো নিয়ে আপনারা আতঙ্কিত। তো ৭১ এর বিভাজনের বিষ সম্বলিত ইতিহাস এত বছর ধরে পড়ে আসতে দেখে কি করেছেন আপনারা? দেখেও না দেখার ভান করে দেশকে রক্তাক্ত এ জায়গায় নিয়ে আসতে দিলেন কেন? এর জন্য দায়ী কারা?
২। শিশুদের কথা চিন্তা করে সাহিত্যরুপ দিয়েছেন আপনারা। ভাল কথা। তো সাহিত্যরুপ দিতে গিয়ে ফ্যাক্ট বাদ দিতে কে বাধ্য করেছে আপনাদের? সেটা স্পষ্ট করে জানান আপনারা। সত্য বাদ দিলে ইতিহাস হয় নাকি? আজ আপনারা সত্য লুকিয়েছেন। কাল আরেক গ্রুপ এটা পাল্টিয়ে মিথ্যা যোগ করে দেবে না এর নিশ্চয়তা কোথায়? আপনারা যে ভাষায় লিখেছেন, তাতে না আছে সত্য আর না আছে সাহিত্য। কোন আবেগ নাই, লড়াইয়ের স্পিরিটের সাথে কোনো সংযোগ (কানেকশন) নেই, এটা সাহিত্যইবা হয় কিভাবে? আপনাদেরকেই আঁকড়ে ধরে থাকতে হবে, আপনাদের কলম দিয়েই লিখতে হবে কেন সব? দেশে কি ভাল মানের বিপ্লবী সাহিত্যিক, কবিদের খুব অভাব ছিল? আপনারা কবি সাহিত্যিকদের থেকে সরাসরি লেখা আহবান করতে পারতেন। তারপর একটা বাছাই কমিটি সেখান থেকে সবচেয়ে উত্তমটি বাছাই করতে পারতেন। সব কিছুতে বুরোক্রাটিক সিস্টেমে ফেলে নিজের গ্রিপে রাখার চেষ্টার আরেক নামই তো স্বৈরাচারিতা। এটাই আপনারা করেছেন।
৩। এ লড়াইয়ের মূল প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ। প্রতিপক্ষকে আড়াল করে কখনো কোন ফ্যাক্ট তুলে ধরা যায়? কাল্পনিক খলনায়ক প্রতিপক্ষ বানিয়েছেন পুলিশকে। কেন, খুনিদের রক্ষা করতে? পুলিশকে অর্ডার দিয়েছে কে? নাম আসলে ক্লাশরুমে বিভাজনের কথা বলছেন? তো ক্লাশরুমে পুলিশের সন্তানেরা থাকবেনা? তাদেরকে অন্যরা প্রতিপক্ষ বানাবে না? তখন আবার বিভাজন হচ্ছে আওয়াজ তুলে পাঠ্যপুস্তক থেকে এই পাঠই তুলে দেবেন না তো? পুলিশের নাম উল্লেখ করা যায়, কিন্তু যারা পুলিশকে পুলিশ থেকে 'পুলিশ লীগ' এ রুপান্তর করে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে তাদের নাম উল্লেখ করতে এত সমস্যা কেন?
৪। নতুন সরকার গঠনের পর পুলিশ যখন সব কিছু বুঝে নেবে এবং যখন নিজেদের গুছিয়ে নিয়ে সরকারের উপর প্রভাব বিস্তার করবে, তখন তারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এর মাধ্যমে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে প্রেসার দিয়ে তাদের নামও যে পাঠ থেকে উঠিয়ে নেবে না এর নিশ্চয়তা কোথায়? যখন পুলিশ বৈধভাবে অস্ত্র ধারণ করতে পারে এবং কারও পক্ষে কিংবা বিপক্ষে অবস্থানের মাধ্যমে একটা সরকারকে ওলোটপালোট করে দিতে পারে, সেখানে তাদের নাম খুনি হিসেবে পাঠ্যপুস্তকে তারা থাকতে দেবে কেন?
৫। এটা নিশ্চিত করে বলা যায় যে, এই পাঠ্যপুস্তকে জুলাই পাঠ লেখার দায়িত্ব যারা নিয়েছেন, যারা এগুলো নিরীক্ষণ করেছেন এবং যারা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তারা জুলাই অভ্যুত্থানের স্পিরিট ধারণ না করা 'আগেই ভাল ছিলাম' গ্রুপের সদস্য । এরা হয় নিজেই স্বৈরাচারের সুবিধভোগী অথবা জুলাইয়ের স্পিরিট ধারণ করার জন্য তারা অনুপযুক্ত। এদের কাজ দেখেই বুঝা যায় ৭১ এ এরা প্রকৃত ইতিহাসকে কিভাবে বিকৃত করে জাতির সামনে তুলে ধরে এত বড় স্বৈরাচার তৈরির বীজ বপন করা হয়েছিল। সন্দেহ নেই, এরা আমাদেরকে এই লড়াই শেষ করে দেশ গড়ার কাজে মন দেয়ার সুযোগ দিতে চায় না। নিজেদের ক্ষুদ্র স্বার্থে লড়াইটা জিয়ে রাখতে চায়। সংঘাতের ঝনঝনানি শব্দ এবং এর মধ্য দিয়ে আসা ঝিমুনি ভাবটা উনাদের খুব প্রিয়।
যারা নিজেদের বাপ দাদার দেয়া মুসলিম নাম আড়াল করে সনাতনী নাম ধারণ করে রাষ্ট্রের সব সুবিধা ভোগ করে গেছে এতদিন, এত বড় রক্তক্ষয়ী একটা বিপ্লবের পর এদের মত লোক এখনো কিভাবে পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজে নিয়োজিত থাকে? চারদিকে স্বৈরাচারের দোসরে ভরপুর। একটা আমূল পরিবর্তন/সংস্কার না করে নির্বাচনে যাওয়া ও তড়িঘড়ি সরকার গঠন করা একটা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত ছাড়া আর কিছুই নয়।
আবু সালেহ ইয়াহইয়া
লন্ডন, ১২ জানুয়ারি ২০২৫
আবু সালেহ ইয়াহইয়া
মন্তব্য করুন