ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল জাহিদুল ইসলাম
মহান স্বাধীনতা দিবসকে ঘিরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সামাজিক মাধ্যমের পোস্টকে ঘিরে তুমুল সমালোচনা চলছে। নেটিজেনরা আওয়ামী লীগ ও ভারতের নীতির তীব্র সমালোচনায় মুখর। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে নিজের অবস্থান তুলে ধরেছেন তথা ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের আলোকে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল জাহিদুল ইসলাম।
সোমবার সন্ধ্যায় নিজের ভ্যারিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট দেন শিবির সেক্রেটারি। পাঠকদের জন্য তার পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
১৭৫৭- স্বদেশীয় মীর্জাফর ও বিশ্বাসঘাতকদের কারণে ১৯০ বছরের জন্য এ ভূখণ্ড থেকে স্বাধীনতা হারিয়ে যায়। সাম্রাজ্যবাদী ইং'রে'জ'রা কলোনির নামে আমাদের ভূমি দখল করে সম্পদ লুটপাট করেছে। তারাই আবার বিশ্বরাজনীতিতে সভ্যতার লেবাসে আমাদেরকে সবক দেয় (সেলুকাস)।
১৯৪৭- হাজী শরিয়াতুল্লাহ, তিতুমীর, আহমেদ বেরলভি ও তাদের উত্তর প্রজন্মের ধারাবাহিক লড়াই সংগ্রাম অ'স'ভ্য ব্রি'টি'শ কলোনি থেকে মুক্তির দেখা মিললো। কিন্তু তারা রেখে গেলেন ইন্টেলেকচুয়াল কলোনি পলিসি। সাথে কিছু হাই কোয়ালিটি সমৃদ্ধ ট্রেনিং প্রাপ্ত দালাল। যার ফলাফল হিন্দু মুসলিম তিক্ততা।
সমাধান নিয়ে হাজির হলেন, তথাকথিত ভারতীয় মুসলিমের ত্রাণকর্তা মি. জিন্নাহ। থিওরি দিলেন "আসো ভাগ হয়ে যাই"। পাকিস্তান ও ইন্ডিয়া ভাগেই নাকি সব সমাধান!!
১৯৪৭-১৯৭১- পূর্ব পাকিস্তান বা বর্তমান বাংলাদেশ নামক ভূখণ্ডের সাথে ইন্ডিয়া ও পশ্চিম পাকিস্তান কেউই ইনসাফ করতে পারলেন না। বৈষম্য চাপিয়ে দিলেন। মাথামোটা কিছু রাজনীতিবীদের অদূরদর্শী ও অপরিপক্ব সিদ্ধান্তের কারণে আবার ভাগের প্রশ্ন। তৈরি হলো প্লট-৭১।
১৯৭১- এ'ন্ডি'য়া দাবি করলো এ'ন্ডি বনাম পা'কি যুদ্ধ হইছে। জিতছে এ'ন্ডি। এখান থেকেই নাকি বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্ম!! ভালো কথা তাহলে এই রাষ্ট্র কার? রাষ্ট্র পরিচালনা কে করবে? এন্ডি ১৬ ডিসেম্বরের পর নিজেরাই চালাতে চেয়েছিল। কিন্তু পাবলিক সেন্টিমেন্ট মাথায় রেখে তারা এং'রে'জদের পলিসি নিল। ইজারা দিল একটি পরিবার ও একটি দলের কাছে।
১৯৭৫- প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের চেতনাকে গলা টিপে এক দেশ, এক দল, বাকশাল কায়েম করলেন। প্রকৃত সমর যোদ্ধারা এতে নড়েচড়ে বসলেন। এজন্যতো যুদ্ধ করিনি। যার ফলশ্রুতিতে ১৫ আগষ্ট।
১৯৭৫ পরবর্তীতে এদেশ একটি গোলকধাঁধার মধ্য দিয়েই গিয়েছে। কখনো ত্রাণকর্তা, কখনো সেই ত্রাণকর্তাই আবার লুটেরা কিংবা স্বৈরাচার চরিত্রে পরিণত হওয়া। এই ধারার মধ্যে সৎ ও দেশপ্রেমিক ছিল খুবই নগণ্য কিছু সংখ্যা। তারা আবার দালালগোষ্ঠীর কাছে ছিল মাইনোরিটি বা ইনিফেরিয়র।
১৯৯৬- স্বজন হারানোর বেদনা নিয়ে হাজির হলেন খু'নি হাসিনা। পরিবার হারানোর বেদনা নাকি উনি ছাড়া আর কেউ বুঝে না। তাই তিনি আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় সাক্ষাৎকারে বলেই দিলেন, "আমার রাজনীতি করার খুব একটা ইচ্ছা ছিল না। আমি আসছি আমার পিতার হত্যার প্রতিশোধ নিতে"। হত্যার রাজনীতি আবারও চাঙ্গা করলেন তিনি। বাকশালের নয়া রুপ ফ্যাসিবাদ জীবন্ত করলেন। কিন্তু ২০০১ সালে এসে ফ্যাসিবাদের ষোলকলা পূর্ণ করতে পারলেন না। এ জন্য ৫ বছর অপেক্ষা করতে হলো।
২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর- লগী বৈঠার তাণ্ডবের মাধ্যমে অপেক্ষায় প্রহর শেষ হতে লাগলো। ভিনদেশী স্ক্রিপটেড নাটক পালটা নাটকের মাধ্যমে তিনি আবারও ক্ষমতায় আসলেন। এসেই উনার ফ্যাসিবাদের বাধা হিসেবে সকল শক্তির তালিকা করলেন। প্রথমেই দেশপ্রেমিক সেনা অফিসার দিয়ে হত্যার উৎসব শুরু করলেন। এরপর বিরোধী নেতৃবৃন্দ, আলেম-উলামা, যারাই ফ্যাসিবাদের পথের কাটা তাদেরকে হত্যা ও গুম অব্যাহত রাখলেন। ৭১ লেগেচি বহন করে একটি অঘোষিত কলোনি ও ফ্যাসিবাদের কায়েমে তিনি সফলতার শীর্ষে অবস্থান করলেন। চেতনার কার্ডই এখানে প্রধানতম হাতিয়ার। হয়ে উঠলেন মাদার অফ ফ্যাসিস্ট। ৭১-এর মিথ্যা বয়ানের চেতনাই ফ্যাসিবাদ কায়েমে প্রধানতম ভূমিকা পালন করেছিল।
২০২৪- ফেরাউন, নমরুদরা পতনের আগ পর্যন্ত ভাবতেই পারেনি, সব কিছুর একটা শেষ আছে। ফ্যাসিস্ট হাসিনাও তার ব্যাতিক্রম নয়। নির্মম গণহত্যা চালিয়েও তার শেষ রক্ষা হয়নি।
হলফ করে বলছি, ২৪-এর ছাত্র-জনতার অভ্যূত্থান একটি অর্গানিক ও ন্যাচারাল মুভমেন্ট ছিল। কোনো সাম্রাজ্যবাদ ও আধিপত্যবাদের প্ল্যানে হয়নি। দালাল সম্প্রদায়ের কোনো ভূমিকাই এখানে ছিল না। পরিস্থিতিই ধাপেধাপে আন্দোলনকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিতে বাধ্য করেছিল। এখানেই মূলত ৫৭, ৪৭, ৫২, ৭১ আর ২৪-এর পার্থক্য।
শহীদ ও গাজীদের ন্যাচারাল চেতনাই আগামীর বাংলাদেশ গড়ে দিবে। এখানে কোনো শক্তির সাথেই আপোষ করার সূযোগ নেই। প্রজন্ম ২৪ এখন সংকীর্ণ চিন্তার উর্ধ্বে উঠে বিশ্বায়নের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতে চায়। তারা যেকোনো আধিপত্যবাদ মোড়লদের চোখে চোখ রেখে কথা বলার প্রতিযোগিতা করতে চায়। শহিদি প্রজন্ম বাংলাদেশকে আর পথ হারাতে দিবে না ইনশাআল্লাহ।
আমাদের সামনে দুটি রাস্তা : চূড়ান্ত বিজয় অথবা শাহাদাত।
(১৬ ডিসেম্বর ২৪)
এনএনবিডি ডেস্ক
waliullah, 18 December, 2024 01:30 PM
চমৎকার, সময় উপযোগী লেখা। তরুণদের জন্য রয়েছ দেশ গড়ার অনন্য পথের দিশা।