• , |
  • ঢাকা, বাংলাদেশ ।
সর্বশেষ নিউজ
* যুদ্ধবিরতি চুক্তির পর কাশ্মির সংকটের স্থায়ী সমাধান চায় পাকিস্তান * হাটহাজারীতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যাত্রীবাহী বাস খাদে * ১০ দফা দাবিতে পেট্রোল পাম্প ও ট্যাংকলরি মালিকদের আলটিমেটাম * রাজনৈতিক ঐকমত্যে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করল সরকার * আ.লীগের বিচা‌রের দা‌বি বিএন‌পিই তু‌লে‌ছিল: সালাহউদ্দিন আহমেদ * নতুন সংবিধান প্রণয়ন হতে বহুদিন লাগতে পারে: আইন উপদেষ্টা * পিনাকী, ইলিয়াস, কনক ও জুলকারনাইনের ইউটিউব নিষিদ্ধ হলো ভারতে * গণঅভ্যুত্থানের মামলা তদন্তে তৈরি হচ্ছে বিশেষ মনিটরিং সেল * তিন দফা দাবিতে আহত জুলাই যোদ্ধাদের শাহবাগ অবরোধ * সারা দেশে বিশৃঙ্খলার পরিকল্পনা হচ্ছে : আসিফ মাহমুদ

রুচির দুর্ভিক্ষে সততার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত

news-details

ছবি: সংগৃহীত


১২ বছরের ইসমাইল। ৬ বছর বয়সে কিশোরগঞ্জের মিঠামইন এলাকা থেকে অভাবের সংসারে বোঝা হয়ে ঢাকায় চলে আসেন পরিবারের সাথে। দু বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় চা বিক্রি করেন।

সকালে যাত্রাবাড়ির শনির আখড়ায় স্কুল করে সন্ধ্যায় আসেন টিএসসিতে। ৬/৭শ টাকা বিক্রি হলেই বাসায় চলে যান। কোন দিন টার্গেট পূরন হতে রাত ১২টা বাজে, 6কোন দিন বা রাত একটা! শুক্র শনিবার ৯টা/১০টার মধ্যেই বিক্রি শেষ হয়ে যায়।  তাতে দিন শেষে তার মুনাফা হয় ৩শ থেকে সারে ৩শটাকা।

সেই ছোট্ট ছেলেটা যে দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করলেন তা মনে রাখার মত। সবার জন্য তো বটেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে যারা চাঁদাবাজি ছিনতাইয়ের সাথে জড়িত তাদের জন্য লজ্জারও।

গতকাল "বাতিঘরে" ইফতার প্রগ্রাম শেষ করে প্রথম আলোর জুয়েল ভাইসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সামনের বট তলায় বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম। এমন সময় ছোট্ট এই চাওয়ালা এসে বলতে থাকেন "ভাই কফি দেই?" বললাম না! আবার জোর করলো  "ভাই নেন না? আজ বেচাবিক্রি বেশি হয়নি, দেই দুই কাপ?" আবারও বললাম দরকার নেই তুমি অন্য কারো কাছে যাও। এরপরে বলা শুরু করলো "ভাই একটা কথা বলি শুনবেন? জরুরি, শুনেন না?"

খুব বিরক্ত হচ্ছিলাম তখন। কিন্তু ওর চোখে মুখে অস্থিরতার ছাপ, আতঙ্ক, চোখ দুটি মাঠের মাঝখানে বারবার! বললো "ভাই আমার কাছে একটা জিনিস আছে বের করে দেখাবো?" কি জিনিস প্রশ্ন করতেই বললো "মোবাইল" 

চুরি করেছো কারো পকেট থেকে? বলে "না, পড়ে পেয়েছি ওখানে" দেখি বলতেই দৌড় দিয়ে মাঠের মাঝখানে অন-টাইম প্লেট দিয়ে ঢেকে রাখা মোবাইলটা এনে হাতে দিতে চাইলো! বললাম তোমার হাতেই রাখো (মরা মেরে খুনের দায় নিতে চাইনা, দেখা গেলো যার মোবাইল সে এতক্ষণে জিডি করে পুলিশের সহায়তায় ট্রাকিং মেশিন নিয়ে ঘুরতেছে) এটা বলে জুয়েল ভাইকে বললাম ওর ছবি ভিডিও নেন। (জানেনই তো বর্তমানে ভিডিও অডিও ছাড়া প্রুভ করা মুশকিল, মামলা খাওয়ার ভয় আছে)।

তোমার কাছে কতক্ষণ ধরে এই ফোন? বললো "১/২ ঘণ্টা হবে" এরমধ্যে কেউ ফোন করে নি? বললো "না"। ফোন পেয়ে বন্ধ করে রেখেছিলে? " না"।

অনিচ্ছা থাকার পড়েও ফোনটা হাতে নিলাম। ( দুজনের পকেটে দুটি শক্তিশালী কার্ড আছে যে কোন পরিস্থিতি সামাল দেয়া যাবে সেই ভরসায়।)

হাতে নিতেই দেখি বেশ কয়েকটি মিসকল। এরমধ্যে কলও চলে আসলো। রিসিভ করার সাথে সাথেই ওপাশ থেকে সস্তির নিশ্বাস "আপা ফোন ধরেছে" জানতে চাইলাম কে বলছেন? "বললো "আমার ফোনটা হারিয়ে ফেলেছি" কোথায় হারিয়েছেন সঠিক লোকেশন বলতে পারছেন না, দু' তিনটি স্পটের কথা বললেন যেখানে যেখানে তারা বসেছিলেন তারমধ্যে ইসমাইল যেখানে পেয়েছেন সেটাও আছে, ফোনের মডেল কি, কি কালার? দেখলাম উত্তর সঠিক দিচ্ছে। আমাদের পরিচয় দিয়ে বললাম আমরা আপনার ভার্সিটির বড় ভাই, কোন সমস্যা নেই দ্রুত এসে নিয়ে যান। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকোলজির মাস্টার্সের শিক্ষার্থী উর্মি শাহরিয়ার এশা। ফোনটা পেয়ে মনে হলো আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছেন। বললেন কিছুদিন পর পরীক্ষা অসংখ্য ডকুমেন্টস এটার মধ্যে। খুব টেনশন হচ্ছিলো। আল্লাহর শুকরিয়া। আপনাদেরকেও ধন্যবাদ। এরপরে ইসমাইলের সততার উপহার দেয়ার জন্য এশা আমাদের কাছ থেকে তাঁকে নিয়ে গেলেন।

আমরা যখন মাঠের মাঝখানে প্লেট দিয়ে মোবাইলটা ঢেকে রাখার কারন জানতে চাইলাম ছোট্ট এই শিশুর বুদ্ধিদীপ্ত উত্তর শুনে আরো অবাক হলাম। বললো ওর মত আরও অনেকে এখানে চা সিগারেট বিক্রি করে, তারা ওর বয়সে বড়, যদি ওরা দেখতে পায় তা হলে নিয়ে যাবে, ওদের হাতে পড়লে মোবাইলটা মালিকের হাতে দিতে পারবেনা। যেখানে পেয়েছে সেখানেই মোবাইলটা ঢেকে রেখে চোখ দুটি নিবদ্ধ করে চা বিক্রি করতে ছিল প্রকৃত মালিকের আসার অপেক্ষায়!

বললাম এখানে এত মানুষ থাকতে তুমি এই কথাটা আমাদের দুজনের কাছেই বা কেনো শেয়ার করতে চাইলে? এই দু ঘণ্টায় অন্য কারো কাছে কেনো বলোনি?

বললো অন্য কারো কাছে বলার সাহস হয়নি!

ইসমাইলের পিতা হানিফা একজন দিন মজুর। নাইট গাটের ডিউটি করেন। মা লতিফা বেগম গেরস্তের কাজ করেন। ৫ ভাই বোনের সংসার। এক রুমের ভাড়া বাসায় থাকেন! গাদাগাদি করে! 

শনির আখড়ার গোবিন্দপুর উপানুষ্ঠানিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেনীতে পড়াশোনাও করে ইসমাইল। নিজের খরচ নিজেই চালান। সংসারেও দেন। মায়ের জমানো টাকা দিয়ে চা বিক্রি করার ফ্লাক্স কিনে সেটা দিয়েই বিজনেস করছেন।

এদেশের আনাচে কানাচে কত এমন হাজারও ইসমাইল সংগ্রাম করছেন, লড়াই করছেন, দু মুঠো ভাতের জন্য, একটু বেঁচে থাকার জন্য, সামান্য পড়াশোনার জন্য, আমরা ক'জন ওদের নিয়ে ভাবি? আমাদের রাষ্ট্র কাঠামোর মধ্যে ওরা আছে? আমরা এমডিজি, এজডিজিসহ আরো কত কি পূরণ করে ফেলছি কাগজে কলমে! অথচ ইসমাইলরা শিশু শ্রম দিচ্ছে, অমানুষিক কায়ক্লেশের মধ্য দিয়ে বড় হচ্ছে, অনাদরে অবহেলায়......

এরাই বাংলাদেশ। এঁরাই আমাদের আগামী....

সেলুট ইসমাইল। সেলুট.......


মো. ইলিয়াস, গণমাধ্যমকর্মী

মন্তব্য করুন