ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও চট্টগ্রাম মহানগরীর আমীর মুহাম্মদ শাহজাহান বলেছেন,দেশ আজ কঠিন সন্ধিক্ষণে। জন্মভূমি বাংলাদেশ আজ বহুমাত্রিক সংকটে নিপতিত। এই অঞ্চল ভবিষ্যতে ভৌগোলিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে বলেই পরাশক্তিগুলো বিশেষ নজরে দেখা শুরু করেছে। এই মূহুর্তে শাসকদের অবস্থান বাংলাদেশের পক্ষে যেমন নেই তেমনি নেই জনগণের পক্ষেও। এমনকি স্বাধীনতার চেতনা নিয়ে প্রতিনিয়ত শোরগোল করে গেলেও সেই স্বাধীনতার ক্ষেত্রেও তারা নিরাপত্তাহীন করে তুলেছে পুরো জাতিকে। তারা গনতন্ত্র,স্বাধীনতা,মানবিক অধিকারের পক্ষেও কোনরূপ প্রতিনিধিত্ব করছে না। এক কথায় বলা যায় এই জালিম সরকারের হাতে বাংলাদেশের ভবিষ্যত নিরাপদ নয়। এই স্বৈরচারী সরকারের ক্ষমতা যদি আরো প্রলম্বিত হয় তাহলে ইসলামের দৈনন্দিন ইবাদত গুলো পালন করার সুযোগও ক্রমাগত সংকুচিত হয়ে আসবে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরীর বাকলিয়া থানা উত্তর আয়োজিত ভার্চুয়াল কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন মহানগরী জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি এফ এম ইউনুস। আরও বক্তব্য রাখেন,থানা সেক্রেটারি সুলতান আহমদসহ নেতৃবৃন্দ।
চট্টগ্রাম মহানগরীর আমীর মুহাম্মদ শাহজাহান বলেন, এই অবস্থা থেকে দেশকে মুক্ত করতে হবে। আমরা ফ্যাসিজমের কাছে আমাদের দেশকে বন্ধী রাখতে পারি না। নির্যাতনের এই ধারা,অগণতান্ত্রিক এই ধারা, স্বৈরচারী এই ধারা প্রিয় বাংলাদেশে চলতে দিতে পারি না। অতএব আমাদের শহীদ নেতৃবৃন্দ শাহাদাতের জীবন্ত সাক্ষী হয়ে বাংলাদেশের জন্য যে আত্মত্যাগ করেছেন, যে চূড়ান্ত কোরবানির দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন সামনের আন্দোলন সংগ্রামের অগ্নিঝরা দিনগুলোতে শাহাদাতের জজবা নিয়ে সেই ভূমিকা পালন করতে হবে। স্বৈরাচার,কর্তৃত্ববাদ,বাকশালমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে হবে । যদি আরো অনেক কুরবানীর প্রয়োজন হয় তার জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। কোরবানি দিয়ে বাংলাদেশের গতিপথ যে ভুল পথে চলে গিয়েছে সেদিক থেকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে হবে।
তিনি আরও বলেন,আমাদের নিকট ইসলামী আন্দোলনের মর্যাদা ও সঠিক ধারনা পরিস্কার থাকতে হবে।আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের উপর যত ফরজ বিধান নাযিল হয়েছে সেই সব ফরজ বিধানগুলোর মধ্যে আল জিহাদু ফি সাবিলিল্লাহ হচ্ছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামকে মানার ক্ষেত্রে ইসলামকে বোঝার ক্ষেত্রে ইসলামী অনুশাসন মেনে চলার ক্ষেত্রে কোন ধরনের বিঘ্ন যেন না থাকে,কোন ধরনের বাধা যেন না থাকে সেই পরিবেশ সৃষ্টি করার যে প্রচেষ্টা চালানো হয় সেটিই হল মূলত আল জিহাদু ফি সাবিলিল্লাহ।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল বলেন আল্লাহ তাঁর কোন ফরয বিধান পালনে মুমিনের পুরো জান-মাল ডিমান্ড করেননি, কিন্তু ‘আল্ জিহাদু ফি সাবিলিল্লাহ্’র জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের পুরো জীবনটাই চেয়েছেন। জান এবং মালের সামগ্রিক কোরবানির মাধ্যম ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বাত্নক প্রচেষ্টাই হচ্ছে আল-জিহাদু ফি সাবিলিল্লাহ্। আল-জিহাদু ফি সাবিলিল্লাহ্ ব্যতীত যদি আল্লাহর জান্নাত পাওয়া যেত এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি পাওয়া যেত তাহলে আল্লাহর প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এত কষ্ট পরিশ্রম করে জিহাদে অবতীর্ণ হওয়ার কোন প্রয়োজনই হতো না। এমনকি হাজার হাজার সাহাবায়ে কেরামকেও শাহাদাতের পথে জীবন বিলাতে হতোনা।
তিনি বলেন, ইসলামী আন্দোলন একটি ফরজ ইবাদতের নাম, এটি কোন রাজনীতির নাম নয়। এটিকে ফরজ ইবাদতের দৃষ্টিকোণ থেকেই আমাদেরকে দেখতে হবে। এটিকে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে গ্রহণ করা যাবে না। আমাদেরকে যথার্থভাবে আল্লাহর দ্বীনকে জানতে হবে এবং সেই জানাটাকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনায় রাখতে হবে। আল্লাহর সাথে যথাযথ সম্পর্ক না রেখে আল্লাহর কোরআনের সাথে যথাযথ সম্পর্ক না রেখে আল্লাহর রাসূলের (সঃ) সাথে যথাযথ সম্পর্ক না রেখে ইসলামী সাহিত্যের সাথে যথাযথ সম্পর্ক না রেখে এই কঠিন পথ পাড়ি দেয়া সম্ভব নয়। কোরআন থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে এই কঠিন পথ পাড়ি দিতে হবে। আমাদেরকে জ্ঞানের ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে হবে। আন্দোলনের কর্মীদেরকে আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞানে পারদর্শী হয়ে তুলনামূলক বিশ্লেষণ করার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে এবং ইসলামের সত্যতা ইসলামের সৌন্দর্য ইসলামের আধুনিকতা সবকিছুই মানুষের সামনে তুলে ধরার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। কারণ আমাদের প্রিয় নবীর (সঃ) নবুয়্যত শুরু করেছিলেন জ্ঞানের কথা বলে তার উপর প্রথম যে ওহী নাজিল হয়েছিল সেটি ছিল জ্ঞানের কথা।
তিনি আরও বলেন, ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের ঈমানকে নিফাক এবং শিরক থেকে মুক্ত রাখতে হবে। ঈমানকে সর্বশক্তি দিয়ে রক্ষা করতে হবে। ঈমানকে ত্রুটিপূর্ণ করা যাবে না। ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের ঈমানের মান হবে তাদের দেহ থেকে যদি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয় তারপরও তারা ইসলামের আওয়াজ থেকে দূরে সরবে না বিপর্যয়ের সময় তারা আল্লাহর ঘোষণা দিয়ে আল্লাহর একত্বের ঘোষণা দিয়ে ঈমানের ঘোষণা দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে।
মহানগরীর আমীর বলেন, আমাদের ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের উত্তম সালাত আদায়কারী হতে হবে। নামাজের প্রতি আমাদের অত্যন্ত যত্নবান হতে হবে। নামাজকে একাগ্রতচিত্তে নিষ্ঠার সাথে আদায় করতে হবে। কোন অবস্থাতে যেন জামায়াতে নামাজ আমাদের কমে না যায়। এক কথায় আল্লাহ যেভাবে চেয়েছেন আমাদেরকে একাগ্রচিত্তে নিষ্ঠা সহকারে নামাজ আদায় করতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা যত ভাল কাজ করব সেই কাজগুলো বিশুদ্ধ নিয়ত এবং এখলাসের সাথে করবো। ইসলামী আন্দোলন কর্মী হিসেবে কোন ধরনের গৌরব এবং অহংকারের কাঁদা যেন আমাদের গায়ে না লাগে,আমাদের সকল কুরবানী,ত্যাগগুলো যেন আল্লাহ সন্তুষ্টির জন্য হয় সেদিকে আমাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখতে হবে। আমাদের কাজের মধ্যে যদি এখলাস থাকে, বিশুদ্ধ নিয়ত তাকে এবং এই জায়গাটি যদি আমরা পবিত্র রাখতে পারি পরিচ্ছন্ন রাখতে পারি তাহলে আমাদের কাজের বরকত প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পেতে থাকবে।
তিনি আরও বলেন, ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের সময়ের অপচয় শতভাগ রোধ করতে হবে। সময়কে গুরুত্ব দেয়া শিখতে হবে। প্রতিটি মিনিট যেন আমাদের আমলে সালেহ্'র সাথে কাটে এবং আল্লাহ সন্তুষ্টির পথে ব্যয় করে সব ধরনের অনর্থক কথা এবং কাজ থেকে নিজেদেরকে বিরত রাখতে হবে। আন্দোলনের কর্মীরা যেন প্রয়োজন ছাড়া অনলাইন জগতে সময় নষ্ট না করে।
মুহাম্মদ শাহজাহান বলেন, আমাদেরকে শেষ রাতে জাগরণকারী হতে হবে। গভীর রাতে আল্লাহর দরবারে ধরনা দেয়া শিখতে হবে। গভীর রাতে যখন আল্লাহ একেবারে নিচের আসমানে চলে আসেন তখন আল্লাহর দরবারে সিজদা অবনত হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। নিজের মাগফেরাত চাইতে হবে,নিজের পিতা মাতার মাগফেরাত চাইতে হবে। আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধব পরিবার সকলের জন্য কল্যাণ কামনা করাই হবে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের কাজ।
তিনি বলেন, আমাদেরকে সংগঠন এবং দ্বীনি আন্দোলনকে সকল কাজের উপর অগ্রাধিকার দিতে হবে। আমার ব্যক্তিগত কাজ আমার পারিবারিক কাজ আমার অন্য যেকোনো কাজের তুলনায় ইসলামী আন্দোলনের এই কাজকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। দ্বীনকে বিজয়ী করার এ কাজকে আকাঙ্ক্ষার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে এটিকে জীবন উদ্দেশ্য হিসেবে গ্রহণ করতে হবে আমাদেরকে ভারসাম্যপূর্ণ জীবনের অধিকারী হতে হবে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রক্রিয়া যেন হিসেবের মধ্যে এসে যায়, একটা রিপোর্টের মধ্যে এসে যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আমরা সারাদিন কি কাজ করলাম আর কি কাজ করতে পারিনি ভালো কিংবা মন্দ যেটাই করি না কেন আত্নসমালোচনা করার মাধ্যমে পরকালীন কঠিন হিসেবের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।সংগঠনের সকল মারুফ কাজে আনুগত্য করতে হবে পূর্ণ আন্তরিকতার সাথে।
এনএনবিডি, ঢাকা
মন্তব্য করুন