• , |
  • ঢাকা, বাংলাদেশ ।
সর্বশেষ নিউজ
* ওবায়দুল কাদের সাহেবরা মানসিক অস্থিরতায় ভুগছেন : রিজভী * নিষেধাজ্ঞা উঠলেও ভারত থেকে পিয়াজ আমদানি হচ্ছে না! * ফিরেছেন এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিক,আবেগ উচ্ছাসে বাঁধভাঙ্গা জোয়ার * শিশু গৃহকর্মীকে হত্যার দায়ে স্বামী-স্ত্রীর যাবজ্জীবন * ডোনাল্ড লু'র আগমনে সরকারের উচ্চমহলে আতংক ছড়িয়েছে : ববি হাজ্জাজ * অনুমোদনহীন ড্রিংকস কোম্পানির মালিকদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা * বাংলাদেশের ওপর ঋণের বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড : টিআইবি * সরকারের পরিবর্তন ঘটলে চোখের জল ফেলার মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না : গয়েশ্বর * মেস মালিকপক্ষের সাথে ইবি শিক্ষার্থীদের মারামারি, আহত ৭ * নাইকো দুর্নীতি মামলা: খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিলেন সাবেক বাপেক্স এমডি

রুপিতে বাণিজ্য,বাংলাদেশের কূটনৈতিক পরাজয়

news-details

ফাইল ছবি


মাস খানেক আগেই সিদ্ধান্ত নেয়া হলো যে,ডলারের উপর থেকে চাপ কমাতে বাংলাদেশ এবং ভারত টাকা এবং রুপিতে আমদানি-রপ্তানীর মূল্য পরিশোধ করবে। অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞ মহল এটাকে স্বাগত জানিয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই সিদ্ধান্ত কিভাবে বদলে গিয়ে তা একতরফা হয়ে গেল তা কারো কাছে বোধগম্য নয়।স্পষ্টত যে,ভারতীয় কূটনৈতিক চালের কাছে বাংলাদেশ হয় হেরে গেছে নয়তো আত্মসমর্পন করেছে।

পত্রিকান্তরে খবর এসেছে যে,ভারতীয় রুপিতে লেনদেন শুরু করতে যাচ্ছে প্রতিবেশী দুই দেশ বাংলাদেশ-ভারত। মার্কিন ডলারের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে দুই দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই লেনদেনের জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিয়েছে। ফলে রুপিতে লেনদেনে প্রস্তুত বাংলাদেশ ও ভারত। আগামীকাল ১১ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে এই লেনদেন কার্যক্রম উদ্বোধন করা হবে। এতে তৃতীয় কোনো মুদ্রার সংশ্লিষ্টতা ছাড়া সরাসরি রুপি ব্যবহার করে আমদানি-রপ্তানির মূল্য বিনিময় করতে পারবে এই দুই দেশ। এতে দুই দেশের লেনদেনের ক্ষেত্রে ডলারের ওপর চাপ কমবে বলে আশা করা হচ্ছে ।

আসলে রুপিতে লেনদেনে ঢাকা-দিল্লির কার কী সুবিধা। জানতে চাইলে অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর  ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ভারতীয় রুপিতে লেনদেন হলে আমাদের সুবিধা তেমন কিছু দেখছি না। আবার ভারতীয় রুপি রিজার্ভ কারেন্সি নয়। কিন্তু এভাবে চলতে থাকলে সোজা কথা অসুবিধাই হবে। কারণ আমরা রপ্তানি করি কম, আর আমদানি করি বেশি। রপ্তানি করলে তারা রুপিতে শোধ করবে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে—আমদানির এতো রুপি কোথা থেকে পাওয়া যাবে। তার মানে, ডলার ভাঙিয়ে রুপি বানিয়ে আমদানির দায় শোধ করতে হবে। অথবা ভারতকে ডলারে দিতে হবে। তাতে আমাদের কোনো লাভ নেই। ভারতও টাকা নিতে চাইবে না। কারণ তারা টাকা কোথায় খরচ করবে। যেমন—ভারত রাশিয়া থেকে রুপিতে অনেক কিছু কিনেছে। এখন রাশিয়া বলছে, ভারতীয় রুপি তারা খরচ করতে পারছে না। অর্থাৎ রাশিয়া এখন রুপিতে লেনদেন করতে চাচ্ছে না। আমি জানি না কোন বিবেচনায় বাংলাদেশ এটি করেছে। এখন দেখার বিষয় ফলাফল কী আসে।       

বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, এই কার্যক্রম চালুর পর ব্যাংকগুলো রুপিতে এলসি করতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংক তাতে অনুমতি দেবে। বাংলাদেশের কোনো ব্যবসায়ী আমদানি বা রপ্তানির ক্ষেত্রে রুপিতে এলসি খুলতে চাইলে তা করতে পারবেন। ভারত অবশ্য মার্কিন ডলারের পাশাপাশি নিজস্ব মুদ্রা রুপিতে অনেক দেশের সঙ্গেই বাণিজ্য শুরু করেছে। তবে দেশটি প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের সঙ্গে শুরু করতে যাচ্ছে রুপিতে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য।

এটা সবার জানা , বাংলাদেশ রুপি এবং টাকা উভয় মাধ্যমেই লেনদেনের জন্য আবেদন করেছিল। রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া তা অনুমোদনও করেছে। এখন লেনদেন প্রক্রিয়া চালু হলে প্রাথমিকভাবে অল্প পরিমাণে রুপিতে লেনদেন হবে। পর্যায়ক্রমে তা বাড়বে। এ ছাড়া, টাকায় লেনদেনও পরবর্তীতে চালু করা হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকও মনে করছে, এই পদ্ধতি চালু করা গেলে ভারতকে বাণিজ্যিক লেনদেনে যে পরিমাণ অর্থ দিতে হতো, তার একটি অংশ আর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে দিতে হবে না। ফলে রিজার্ভের ওপর কিছুটা হলেও চাপ কমবে। এতে এক্সচেঞ্জ রেটের ক্রস কনভারশন কিছুটা কমে আসবে। ব্যবসার খরচও কমবে। তবে এটি চালু হওয়ার পর বোঝা যাবে আসলে কতটা সাশ্রয় হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ভারতে বছরে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ। এর বিপরীতে দেশটি থেকে আমদানি হয় প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। এই চিত্র থেকে এটা স্পষ্ট, বাংলাদেশ রপ্তানি করে ২ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ রুপি পাবে, যা এত দিন ডলারে পেয়ে আসত। আর আমদানির ক্ষেত্রেও দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি আমদানি মূল্য রুপিতে পরিশোধের সক্ষমতা এই মুহূর্তে বাংলাদেশের নেই। ফলে আমদানি বাবদ বাকি অর্থ ডলারেই শোধ করতে হবে।

কোনো ব্যাংক বা ব্যবসায়ী ডলার কিংবা অন্য কোনো বৈদেশিক মুদ্রা দিয়ে রুপি কিনে আমদানি দায় নিষ্পত্তি করতে পারবে না। বাংলাদেশ অংশে সোনালী, ইস্টার্ন ও স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার মাধ্যমে এ বাণিজ্য হবে। ভারতের অংশে স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া এবং আইসিআইসিআই ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন হবে।

এ বিষয়ে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, মার্কিন ডলারের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে এই উদ্যোগ কিছুটা হলেও কাজে দেবে। রুপিতে লেনদেন ডলার নির্ভরতা কিছুটা কমিয়ে দেবে, যা বর্তমান প্রেক্ষাপটে ইতিবাচক। তবে শুধু ভারতীয় রুপিতে থাকলে চলবে না, এই লেনদেন সুবিধা টাকায়ও চালু করতে হবে। যদিও ভারতের সঙ্গে বিশাল বাণিজ্যে বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ খুব কম। তবে ভবিষ্যতে টাকায় লেনদেনের ব্যবস্থা করতে হবে।

এই বিষয়ে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, আমাদের আমদানি ও রপ্তানিতে বড় ধরনের পার্থক্য রয়েছে। এ জন্য রুপিতে লেনদেনে ডলার-সংকট কমবে না। উলটো আমরা আগে যে ২ বিলিয়ন ডলার পেতাম, সেটা এখন ভারত রুপিতে পরিশোধ করবে। এই পদক্ষেপে বাংলাদেশের কোনো লাভ নেই। এতে বাংলাদেশে ভারতীয় রুপির ডিমান্ড বাড়বে। আর ভারতে মুদ্রা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শক্তিশালী হবে।

কূটনৈতিক মহল মনে করছেন,টাকা ও রুপিতে বাণিজ্যের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসাটা বাংলাদেশের বড় ধরনের কূটনৈতিক পরাজয়।রাজনৈতিক মহল বলছেন,নির্বাচন সামনে বিধায় ভারতীয় সমর্থন আদায়ের জন্য বর্তমান সরকার ভারতকে এই সুবিধা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞ মহলের অভিমতেই প্রকাশ যে,এতে বাংলাদেশের ক্ষতি হবে। বছরে ২ বিলিয়ন ডলার রপ্তানীর মাধ্যমে যেটা ভারত থেকে পাওয়া যেত সেটাও এখন পাওয়া যাবেনা। বরং তার সমপরিমান রুপি পাবো । আর ভারত থেকে আমদানির ব্যয় মিটানোর জন্য অতিরিক্ত ১২ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমান রুপি ডলার ভাঙ্গিয়েই কিনতে হবে।

বিশেষজ্ঞ মহলের মতে,এই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ একতরফা। এতে ভারতেরই পোয়া বারো হবে।‘ডলারের উপর চাপ কমবে’এমন কথা বলে বিষয়টা চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হলেও বাস্তবে ভারতকে একতরফা সুবিধা দেয়া হবে। এতে বাংলাদেশের ক্ষতি ছাড়া লাভের কোন সম্ভাবনা নেই।


শহীদুল ইসলাম

মন্তব্য করুন