ছবি: সংগৃহীত
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের আলাস্কার বৈঠক সাড়ে তিন ঘণ্টারও কম সময়ে শেষ হয়। বৈঠকে আশাপ্রদ কোনও ফলাফল না হলেও, কিছু স্বস্তির উপাদান ছিল বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
যুদ্ধের মৃত্যু ও ধ্বংসযজ্ঞ থেকে মুক্তি পেতে মরিয়া সবাই। তবু ইউক্রেন ও ইউরোপের সবচেয়ে বড় ভয় ছিল, ট্রাম্প রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের ভূখণ্ডগত দাবির কাছে নতি স্বীকার করে বসবেন কি না। আর এমনটা হলে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে পড়তে হতো এক কঠিন পরিস্থিতির মুখে। নিজ দেশের ২০ শতাংশেরও বেশি ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়া, অথবা এমন একটি শান্তিচুক্তি প্রত্যাখ্যান করা, যা তার কাছে এক বিষমিশ্রিত পেয়ালা হয়ে দাঁড়াত।
আলাস্কার বৈঠকে ট্রাম্প ও পুতিন ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি নিয়ে তারা কোনও চুক্তিতে পৌঁছাতে পারেননি। প্রায় তিন ঘণ্টার বৈঠকের পর দুই নেতা গণমাধ্যমের সামনে যৌথ বিবৃতি দেন। কিন্তু তারা সাংবাদিকদের কোনও প্রশ্ন গ্রহণ না করেই সরাসরি স্থান ত্যাগ করেন।
আলাস্কার অ্যাঙ্কোরেজে উপস্থিত ছিলেন বিবিসির তিনজন সংবাদদাতা। এই বৈঠক যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার জন্য কী বার্তা দিল এবং ইউক্রেন যুদ্ধের ভবিষ্যৎ এখন কোন পথে এগোতে পারে, এনিয়ে লিখেছেন তারা।
ট্রাম্পের ‘চুক্তিবাজ’ ভাবমূর্তিতে আঘাত
বৈঠক শেষে ট্রাম্প বলেন, “চুক্তি না হওয়া পর্যন্ত চুক্তি হয় না।” এই কথার মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে যায়, কয়েক ঘণ্টার আলোচনার পরও তাদের মধ্যে কোনও চুক্তি হয়নি। যুদ্ধবিরতিরও কোনও সমাধান পাওয়া যায়নি। কার্যত উল্লেখযোগ্য কিছুই ঘোষণা করা সম্ভব হয়নি।
অবশ্য ট্রাম্প দাবি করেন, তিনি ও পুতিন ‘কিছু দারুণ অগ্রগতি’ করেছেন। কিন্তু কী ধরনের অগ্রগতি, সে বিষয়ে তিনি কোনও নির্দিষ্ট তথ্য দেননি। ফলে বিষয়টি অনুমান পর্যন্তই রয়ে গেছে।
“আমরা সেখানে পৌঁছাতে পারিনি” এই স্বীকারোক্তি দেওয়ার পর ট্রাম্প সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে করা আর কোনও প্রশ্ন নেননি। উল্টো শত শত সাংবাদিককে রেখে দ্রুত হলঘর থেকে বেরিয়ে যান।
ওয়াশিংটন ডিসি থেকে এত দীর্ঘ ভ্রমণ শেষে ট্রাম্প শুধু অস্পষ্ট ও ধোঁয়াশাপূর্ণ বক্তব্যই দিয়েছেন। তবে ইউরোপীয় মিত্ররা কিংবা ইউক্রেনের কর্মকর্তারা স্বস্তি পাচ্ছেন এই ভেবে যে, ট্রাম্প একতরফাভাবে কোনও ছাড় দেননি বা এমন কোনও চুক্তি করেননি যা ভবিষ্যতের আলোচনাকে দুর্বল করে দিতে পারত।
নিজেকে শান্তির দূত ও চুক্তিবাজ হিসেবে তুলে ধরতে ভালোবাসেন ট্রাম্প। কিন্তু এই বৈঠকের পর তিনি আলাস্কা থেকে কোনও শান্তি-চুক্তি বা আলোচনার সাফল্য ছাড়াই ফিরে গেলেন।
পুতিনকে সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানাতে গিয়ে ট্রাম্প বলেন, তিনি আশা করেন খুব শিগগির আবারও তাদের বৈঠক হবে। সঙ্গে সঙ্গেই পুতিন ইংরেজিতে হেসে উত্তর দেন, “পরেরবার, মস্কোতে।”
এতে ট্রাম্প মন্তব্য করেন, “এ ব্যাপারে কিছু সমালোচনা আসতে পারে। কিন্তু আমি মনে করি, এটি সম্ভব হতে পারে।”
ট্রাম্প আগেও বলেছিলেন, তিনি খুব শিগগিরই একটি ত্রিপাক্ষিক বৈঠক আয়োজন করতে চান, যেখানে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিও উপস্থিত থাকবেন। আলাস্কায় বৈঠক শেষে তিনি ঘোষণা করেন, তিনি ন্যাটো কর্মকর্তাদের ও জেলেনস্কিকে ফোন করে এই বৈঠকের বিষয়ে আলোচনা করবেন।
ফক্স নিউজের শন হ্যানিটিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করা হয়, বৈঠকটিকে ১ থেকে ১০-এর মধ্যে কত দেবেন। জবাবে তিনি বৈঠকটিকে “১০-এর মধ্যে ১০” হিসেবে বর্ণনা করেন।
তিনি বলেন, “আমাদের সম্পর্ক দারুণ হয়েছে।” এরপর তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন যে, কোনও চুক্তিতে পৌঁছানো এখন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের ওপর নির্ভর করছে।
ট্রাম্প বলেন, “এখন কাজটা প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির করতে হবে। আমি এটিও বলতে চাই যে, ইউরোপীয় দেশগুলোকেও কিছুটা অংশ নিতে হবে। তবে এটি মূলত প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির দায়িত্ব।”
তিনি আরও যোগ করেন, তাকে চাইলে তিনি পরবর্তী বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন। জেলেনস্কির উদ্দেশে তিনি সরাসরি বার্তা দেন, “চুক্তি করুন।”
ট্রাম্পের হাতে ইউক্রেন বা রাশিয়ার মতো এতটা ঝুঁকি ছিল না। তবুও এই বৈঠক ব্যর্থ হওয়ায় তার দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বিশেষত তিনি আগে বলেছিলেন, এই বৈঠকের ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনা মাত্র ২৫ শতাংশ।
আরও বিব্রতকর ছিল প্রেস কনফারেন্সের সূচনার মুহূ্র্ত। সাধারণত হোয়াইট হাউসে বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট মূল বক্তব্য রাখেন আর বিদেশি অতিথিরা নীরবে তা শোনেন। কিন্তু আলাস্কায় পুতিন দীর্ঘ বক্তব্য দিয়ে শুরু করেন আর ট্রাম্প নীরব দাঁড়িয়ে থাকেন। অনেকে এই বিষয়টি ট্রাম্পের জন্য মর্যাদা হানিকর বলে মনে করেন।
আলাস্কা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ভূখণ্ড হলেও পুতিন যেন অনেকটা স্বাচ্ছন্দ্যে ছিলেন। তার কর্মকর্তারা প্রায়ই স্মরণ করিয়ে দেন যে, ১৯শ শতকে বিক্রি হওয়ার আগে এই অঞ্চল ছিল ‘রাশিয়ান আমেরিকা’। ফলে এই বিষয়টিও আগামী দিনগুলোতে ট্রাম্পকে ভেতরে ভেতরে অস্বস্তিতে ফেলতে পারে। সংবাদমাধ্যমও বৈঠকটিকে ব্যর্থ হিসেবে তুলে ধরছে।
শুক্রবার সাংবাদিকরা প্রশ্ন করার সুযোগ পাননি। তাই অমীমাংসিত থেকে গেছে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন, ট্রাম্প কি রাশিয়ার বিরুদ্ধে তার ঘোষিত নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবেন?
ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, তিনি হয়তো দুই বা তিন সপ্তাহের মধ্যে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে তিনি আগেই সতর্ক করেছিলেন যে, যুদ্ধবিরতির পথে রাশিয়া না এগোলে কঠোর পরিণতি ভোগ করতে হবে। এই প্রেক্ষাপটে এত অস্পষ্ট উত্তর নতুন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে, সমাধান দেয়নি।
বিশ্ব মঞ্চে পুতিনের আলোচনার মুহূর্ত
কখন একটি “প্রেস কনফারেন্স” আসলে প্রেস কনফারেন্স নয়?
যখন সেখানে কোনও প্রশ্নোত্তর হয় না।
সভা কক্ষে বিস্ময় ছড়িয়ে পড়ে যখন প্রেসিডেন্ট পুতিন ও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কেবলমাত্র নিজেদের বিবৃতি পড়ে মঞ্চ থেকে নেমে যান। একটিও প্রশ্ন গ্রহণ করেননি।
রাশিয়ান প্রতিনিধিদলের সদস্যরাও দ্রুত হলঘর ত্যাগ করেন। সাংবাদিকরা বারবার প্রশ্ন ছুড়ে দিলেও তারা কোনও উত্তর দেননি।
আর এটি স্পষ্ট করে দিল, ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে ভ্লাদিমির পুতিন ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে এখনও বড় ধরনের মতপার্থক্য রয়েছে।
ট্রাম্প বারবার রাশিয়ার যুদ্ধবিরতির দাবি তুলেছেন। কিন্তু পুতিন তা মেনে নেননি।
দিনের শুরুতে পরিবেশ ছিল ভিন্ন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পুতিনকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য আক্ষরিক অর্থেই লালগালিচা বিছিয়ে দেন। তাকে এক সম্মানিত অতিথি হিসেবে অভিহিত করেন।
কিন্তু এরপর ট্রাম্প কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবেন? কারণ তিনি এখনও পুতিনকে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে রাজি করাতে পারেননি।
আগে ট্রাম্প কঠোর অবস্থানের হুমকি দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, রাশিয়া যুদ্ধবিরতির আহ্বান উপেক্ষা করলে দেওয়া হবে চূড়ান্ত আল্টিমেটাম, নির্দিষ্ট সময়সীমা আরোপ এবং নতুন নিষেধাজ্ঞা।
কিন্তু তিনি এখনও (এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত) সেই পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করেননি।
প্রশ্ন হলো, তিনি কি তা করবেন?
ইউক্রেনে স্বস্তি, তবে সামনে অনিশ্চয়তার ভয়
অ্যাঙ্কোরেজের ঘটনা অনেকের কাছে যেন এক অসম্পূর্ণ সমাপ্তি। তবে কিয়েভ কিছুটা স্বস্তিতে আছে এই ভেবে যে, চুক্তি না হওয়ায় ইউক্রেনকে কোনও ভূখণ্ড ছাড়তে হয়নি।
ইউক্রেনের জনগণ ভালো করেই জানেন, অতীতে রাশিয়ার সঙ্গে করা প্রায় সব চুক্তিই ভেস্তে গেছে। তাই এখানে কোনও চুক্তি হলেও তারা তা নিয়ে সন্দিহান থাকতেন।
তবে একটা বিষয় তাদের নতুন করে আতঙ্কিত করেছে। গণমাধ্যমের সামনে ট্রাম্পের পাশে বসেই ভ্লাদিমির পুতিন বললেন, যুদ্ধের “মূল কারণগুলো” দূর না হলে স্থায়ী শান্তি আসবে না।
এই ভাষার অর্থ হচ্ছে, পুতিন এখনও তার “বিশেষ সামরিক অভিযান”-এর মূল লক্ষ্য থেকে সরে আসেননি। সেই লক্ষ্য হলো, ইউক্রেনকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ভেঙে দেওয়া। পশ্চিমা বিশ্বের তিন-সাড়ে তিন বছরের প্রচেষ্টা তার মনোভাব বদলাতে পারেনি। আলাস্কার এ সম্মেলনও তার ব্যতিক্রম নয়।
বৈঠকের পর যে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে, সেটিই এখন সবচেয়ে উদ্বেগজনক। সামনে কী হবে? রাশিয়ার হামলা কি নিরবচ্ছিন্নভাবে চলতে থাকবে?
পশ্চিমা দেশগুলো গত কয়েক মাস ধরে নানা সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে। কিন্তু সময় পেরিয়ে গেলেও কোনও ফল হয়নি। হুমকি দেওয়া হলেও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ইউক্রেনীয়দের চোখে এটি যেন পুতিনকে আক্রমণ চালিয়ে যাওয়ার আমন্ত্রণ।
ইউরোপ হয়তো তাই অ্যাঙ্কোরেজ বৈঠকে অগ্রগতির অভাবকেও সেই একইভাবে দেখবে।
ট্রাম্পের কূটনীতি যারা ঘনিষ্ঠভাবে অনুসরণ করেছেন, তাদের কাছে এই বৈঠকটি স্বাভাবিকভাবেই তুলনার জন্ম দিয়েছে। এটি অনেকটাই মিলে গেছে সাত বছর আগে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উনের সঙ্গে ট্রাম্পের প্রথম সাক্ষাতের সঙ্গে। সেই বৈঠকও ছিল আলিঙ্গন, করমর্দন, পারস্পরিক প্রশংসা-ভরা চিঠিপত্রে ভরপুর। কিন্তু বাস্তবে কোনও অগ্রগতি হয়নি। উল্টো উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক অস্ত্রের ভাণ্ডার বেড়েছে।
জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপারপাওয়ার সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ রবার্ট লিটওয়াক মন্তব্য করেছেন, “এটি একেবারেই কিমের বৈঠকের মতো। চমকপ্রদ আয়োজন বেশি, কিন্তু বিষয়বস্তুতে শূন্য। প্রস্তুতি ছিল খুবই সামান্য। আর এর মধ্যে ছিল এক ধরনের নৈতিক ঝুঁকি, যুদ্ধাপরাধীকে বৈধতা দেওয়ার ঝুঁকি।”
বিশ্লেষকদের অনেকের মতে, পুতিন এই বৈঠক থেকে সবচেয়ে বড় উপহারই পেয়েছেন। তিনি আবারও বিশ্ব নেতাদের সমাজে ফিরে আসার সুযোগ পেলেন। দিনের শুরু থেকেই তিনি যেন নিয়ন্ত্রণে ছিলেন। তার বিমান অবতরণ করে যুক্তরাষ্ট্রের এমন এক সামরিক ঘাঁটিতে, যেটি একসময় রাশিয়ার ভূখণ্ড ছিল। ঘাঁটিতে দাঁড়িয়ে ছিল সারি সারি এফ-২২ যুদ্ধবিমান। সেই মুহূর্ত থেকেই পরিবেশে পুতিনের আধিপত্য ধরা পড়েছিল।
এক দশক পর পুতিন হাসিমুখে বিমান থেকে নেমে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেন। তিনি ট্রাম্পের নিজস্ব লিমুজিনে চড়ে বৈঠকস্থলের দিকে রওনা দেন। আর বৈঠক শেষে দেখা গেল, আয়োজক হিসেবে ট্রাম্পের প্রথাগত বিশেষাধিকার তিনি ছেড়ে দিলেন। সাধারণত বৈঠকের সূচনা বক্তব্য দেন স্বাগতিক প্রেসিডেন্ট। কিন্তু এবার প্রথম মন্তব্য করলেন পুতিন।
তিনি নিজের বক্তব্যে বলেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট জোসেফ আর. বাইডেনের সঙ্গে কাজ করতে তার কতটা সমস্যা হয়েছিল। একইসঙ্গে তিনি ট্রাম্পের দাবিকে পুনর্ব্যক্ত করেন যে, যদি ২০২২ সালে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকতেন তবে ইউক্রেন যুদ্ধ হতো না।
কোনও ধরনের সমঝোতা বা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কি না, তা জানতে হয়তো আরও কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে। ট্রাম্প বলেছেন, তিনি ইউরোপীয় মিত্রদের ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে ব্রিফ করবেন।
কিন্তু এর মধ্যেই পুতিন তার বড় একটি যুদ্ধ লক্ষ্য পূরণ করেছেন। তিনি নিষেধাজ্ঞায় বন্দী এক স্বৈরশাসকের অবস্থান থেকে বেরিয়ে এসেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট তাকে স্বাগত জানিয়েছেন এক শান্তির দূত হিসেবে। তিনি সময় কিনে নিয়েছেন। তার তেল খাতে নতুন নিষেধাজ্ঞার সব আলোচনা তিনি প্রশমিত করেছেন। অথচ তিনি কোনও ছাড় দেননি।
তবে কতদিন এটি কার্যকর থাকবে তা অনিশ্চিত। অবশ্য চার ঘণ্টারও কম সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে পুতিন যে কূটনৈতিক সাফল্য দেখালেন, তা নিঃসন্দেহে চিত্তাকর্ষক।
সোমবার ট্রাম্প-জেলেনস্কি মুখোমুখি
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, তিনি সোমবার হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করবেন। বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য হবে “হত্যা ও যুদ্ধ শেষ করার সব বিস্তারিত বিষয়ে আলোচনা করা।”
জেলেনস্কি ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনে এক ঘণ্টা ত্রিশ মিনিটের বেশি সময় আলাপ করেছেন। ট্রাম্প তখন এয়ার ফোর্স ওয়ানে ছিলেন, আলাস্কা থেকে ফেরার পথে। শুক্রবার তিনি প্রায় তিন ঘণ্টা রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন।
৪৭ বছর বয়সী ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, ফোন আলাপের প্রথম এক ঘণ্টা চলেছিল দ্বিপাক্ষিকভাবে। এরপর ইউরোপীয় নেতারা কথোপকথনে যোগ দেন।
এই ফোন কলে অংশগ্রহণকারী নেতাদের মধ্যে ছিলেন ন্যাটোর মহাসচিব মার্ক রুটে, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁ, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার, পোলিশ প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টুস্ক, ইতালীয় প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি ও জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্জ।
জেলেনস্কি শনিবার সোশাল মিডিয়া এক্সে লিখেছেন, “ইউক্রেন পুনরায় নিশ্চিত করছে যে, আমরা শান্তি অর্জনের জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাতে প্রস্তুত। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প রাশিয়ার নেতার সঙ্গে তার বৈঠক এবং আলোচনার প্রধান বিষয়গুলো সম্পর্কে অবহিত করেছেন।”
ট্রাম্প নিশ্চিত করেছেন যে, সোমবার হোয়াইট হাউসে জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক সফল হলে জেলেনস্কি ও পুতিনের সঙ্গে সরাসরি ত্রিপাক্ষিক বৈঠক নির্ধারিত হবে।
ট্রাম্প শনিবার ট্রুথ সোশালে লিখেছেন, “যদি সবকিছু ঠিকঠাক হয়, আমরা তখন প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে বৈঠক নির্ধারণ করব। সম্ভাব্যভাবে, এটি মিলিয়ন মানুষকে জীবন বাঁচাতে সাহায্য করবে।”
তথ্যসূত্র : বিবিসি, নিউ ইয়র্ক টাইমস ও সিএনএন।
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
মন্তব্য করুন