• , |
  • ঢাকা, বাংলাদেশ ।
সর্বশেষ নিউজ
* ‘সকল কাজের জন্য আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার অনুভূতি থাকতে হবে’ * জনগণের ভোটের অধিকার ও অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য রাজনীতি করি : ড. মঈন খান * বাংলাদেশের মানচিত্রে আধিপত্যবাদী শকুনের নজর পড়েছে : ডা: ইরান * আমরা একটা পরাধীন জাতিতে পরিণত হয়েছি : মেজর হাফিজ * চট্টগ্রামে জুতার কারখানায় লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে * শ্রীলঙ্কার মূল্যস্ফীতি শূন্যের কোটায় * চট্টগ্রামে জুতার কারখানায় আগুন * সারা দেশে অর্থসহ কুরআন পাঠ দিবস পালিত * ভারতের সবচেয়ে বড় পণ্য হলো আওয়ামী লীগ : গয়েশ্বর * ইন্ডিয়া আউট এবং ভারতীয় পণ্য বয়কট, বিএনপির অবস্থান

পিরোজপুরের ইন্দুরকানীতে শুঁটকিপল্লীতে অপার সম্ভাবনা

news-details

শুটকি পল্লী, ইন্দুরকানী,পিরোজপুর (ছবি: এনএনবিডি)


পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্যবন্দরের কাছে গড়ে উঠেছে শুঁটকিপল্লী। প্রাকৃতিক উপায়ে কেমিকেলমুক্ত শুঁটকির উৎপাদন করায় দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এখানকার শুটকি ব্যাবসা। 

জেলার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক চাহিদা থাকায় দিন দিন বাড়ছে এর উৎপাদন। পাড়েরহাট বন্দর বঙ্গোপসাগরের খুব কাছাকাছি হওয়ায় এখানে গড়ে উঠেছে একটি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র। এখান থেকে সামুদ্রিক মাছ সংগ্রহ করে তৈরি করা হয় শুটকি। 

অগ্রহায়ণ মাস থেকে শুরু করে পুরো ফাল্গুন মাস পর্যন্ত শুটকির ভরা মৌসুম হওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী শুটকি সরবরাহ নিশ্চিত করতে শুঁটকিপল্লির শ্রমিকরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন।

মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পাড়েরহাট মৎস্য বন্দরের দক্ষিণে কচা নদীর তীরে ৮ টি বাসা নিয়ে এ শুটকি পল্লী গড়ে উঠেছে। ১০ থেকে ১২ জন ব্যবসায়ী ছোট্ট ঝুপড়িতে শুটকি তৈরি করছেন। কেউ কেউ পাড়েরহাট বন্দর থেকে মাছ সংগ্রহ করে মাছগুলো ধুয়ে নিচ্ছেন। কেউ বড় মাছ কাটছেন, লবন মিশিয়ে বাঁশের তৈরি মাচার উপরে বিছিয়ে মাছ শুকানোর কাজ করছেন। কেউবা চট্টগ্রামে চালান করার জন্য শুকানো শুটকি বস্তায় ভরে বাসায় সংরক্ষণ করেছেন।

জানা গেছে, প্রায় দুইশ’ বছর ধরে পিরোজপুরের পাড়েরহাটে চলে আসছে এই শুটকির ব্যবসা। সাধারণত ছুড়ি, কোরাল,কাইল্লা,বাইগ পোমা,হাইতা, মর্মা, চিতল, ঢেলা, মধু ফ্যাপসা, চাপিলা, লইট্যা সহ ৩০ থেকে ৩৫ প্রজাতির মাছ শুটকি করা হয় পিরোজপুরের এই শুটকি পল্লীতে। শীত মৌসুমে এসব প্রজাতির মাছ বঙ্গোপসাগরে জেলেদের জালে ধরা পড়ে বেশি। অগ্রহায়ণ থেকে ফাল্গুন পর্যন্ত শুটকি করার কার্যক্রম বেশি চলে। শীত থাকলেই শুটকির মান ভাল থাকে। বেশি গরম পড়লে শুটকির মান নষ্ট হয়ে যায়। যার কারণে গরমে কেউ শুটকি করেন না। মাছভেদে প্রতি কেজি 

শুঁটকি বিক্রি হয় ৬০০ থেকে ২ হাজার টাকায়।

শুটকি ব্যবসায়ী মো. আনোয়ার হোসেন তালুকদার জানান, মৌসুমের শুরুতে পাড়েরহাট মৎস্য বন্দরে প্রচুর মাছ পাওয়া যায়। জেলেরা মাছ ধরে সরাসরি বন্দরে নিয়ে আসে। সেখান থেকে আমরা শুটকির জন্য মাছ সংগ্রহ করি। ছুড়ি, কোরাল, হাইতা, মর্মা, চিতল, ঢেলা, মধু ফ্যাপসা, চাপিলা, লইট্যাসহ ৩০ থেকে ৩৫ প্রজাতির মাছ শুটকি করা হয়। 

মো. ইব্রাহিম মুন্সি এক শ্রমিক বলেন, আমি এখানে চার বছর ধরে কাজ করছি আমাদের শুটকিতে কোনো ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না। মাছ শুকাতে ৮ থেকে ১০ দিন সময় লাগে। প্রাকৃতিকভাবে রোদে শুকিয়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ভাবে শুটকি করা হয়। এজন্য এখানকার শুটকির চাহিদা অনেক বেশি।

মো. গোলাম মোস্তফা নামে এক শুটকি ব্যবসায়ী বলেন, আমাদের এখানে মাছ শুকানোর জায়গা অনেক কম। নদীর তীরে শুটকি পল্লী হওয়ায় প্রতিবছরই নদী ভাঙনে আমাদের জায়গা কমে যাচ্ছে ফলে পাশের ধানের জমিতে শুটকি করতে হচ্ছে আমাদের জন্য সরকার একটা নির্দিষ্ট জায়গা করে দিলে এ পেশা ধরে রাখা সম্ভব। এছাড়া ব্যাংক থেকে স্বল্প সুদে পর্যাপ্ত ঋণের ব্যবস্থা করে দিলে এ পেশায় জড়িতরা টিকে থাকতে পারবে। 

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তপন কুমার ব্যাপারী বলেন, শুটকি পল্লীতে ইন্দুরকানী উপজেলার অনেক শ্রমিক কাজ করেছেন আমরা তাদের সার্বক্ষণিক তদারকি করছি। 

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবদুল বারী বলেন, মাছের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় কাঁচা মাছের পাশাপাশি জমে উঠছে এখানকার শুঁটকির ব্যবসা। তাই আমরা প্রথম পর্যায়ে মৎস্যজীবী ও শুঁটকি প্রক্রিয়ার কাজে জড়িত ২০ জনকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। ভবিষ্যতে আরও বেশি জনবলকে প্রশিক্ষিত করা হবে। এই শুঁটকিপল্লী থেকে প্রতি বছর লক্ষাধিক কেজি স্বাস্থ্যসম্মত শুঁটকি উৎপাদন করা হয়। আমরা নিয়মিত এখানকার শুটকি পরিদর্শন করছি।

 


মো. হাসিব বিল্লাহ, পিরোজপুর সংবাদদাতা

মন্তব্য করুন