• , |
  • ঢাকা, বাংলাদেশ ।
সর্বশেষ নিউজ
* মাগুরায় আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় সাকিবকে তলব * পররাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে বৈঠকে পিটার হাস * নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠানোর বিষয়ে যা বলল জাতিসংঘ * বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাসের দুদকের মামলার রায় আজ * গোলান মালভূমিতে সেনা মোতায়েন রাশিয়ার, ইসরাইলের জন্য নতুন বার্তা: রিপোর্ট * মিয়ানমারে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর হামলায় ৪০ সেনা নিহত * যে কারণে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না রওশন এরশাদ * ‘দালাল-ফরিয়াদের নিয়ে নির্বাচনের পাতানো খেলা বন্ধ করুন’ * হেনরি কিসিঞ্জার মারা গেছেন * নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন করতে আমরা বাধ্য : সিইসি

প্রশাসন

রুলী বিশ^াস থেকে অনুপম

news-details

ছবি-প্রতীকী


জনশ্রæতি আছে যে, বিসিএস-এর মাধ্যমে প্রশাসন ক্যাডারে যারা যোগদান করেন, তাদের প্রশিক্ষণের শুরুতেই বয়ান দেয়া হয়, ‘আপনি হচ্ছেন সব বসের বড় বস বিষয়টিকে আমি এতোদিন গুজব বা কথার কথা বলেই মনে করে এসেছি। কারণ, একশ্রেণির রসিক মানুষ শুধুমাত্র কৌতুক বা হাস্যরস সৃষ্টির জন্য ধরনের অভিনব কথার অবতারণা করেন। কিন্তু আমার এই ধারণা কিছুটা ধাক্কা খেয়েছে জাতীয় শিক্ষক দিবসেরটক শো একজন বিশ^বিদ্যায় শিক্ষক আলোচকের বক্তব্য থেকে। আমিও ছিলাম সেখানে। শিক্ষা ক্যাডার তথা শিক্ষকদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ, একশ্রেণির আমলার অতিমাত্রায় ক্ষমতার অপব্যবহার এবং ক্ষেত্র বিশেষে তাদের দ্বারা শিক্ষক লাঞ্ছনার বিষয় আমি অবতারণা করলে সংশ্লিষ্ট আলোচক জানান, ‘ দোষটা কোন আমলার নয় বরং আমতন্ত্রের তথা সিস্টেমের তিনি তার এক আমলা বন্ধুর আত্মস্বীকৃতির সূত্র ধরে উপরোক্ত অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করলেন। বিষয়টিকে আমি দুই বন্ধুর মধ্যে ফান-রসিকতা বা খুনসুটি মনে করায় টকশোর আলোচকদের মধ্যে রীতিমত হাস্যরসের অবতারণা হয়েছিল।

আমি বিষয়টিকে ভিত্তিহীন জনশ্রæতি এবং দুই ভিন্ন পেশার বন্ধুর মধ্যে হাস্যরস মনে করলেও বিষয়টি এখানেই থেমে থাকেনি বরং একশ্রেণির আমলার অতিমাত্রার ক্ষমতার অপব্যবহার সে কথাকে নতুন করে আলোচনায় এনেছে। এতে প্রমাণিত হয় যে, প্রজতন্ত্রের কর্মচারি নবীন আমলাদের সেবার মানসিকতার চেয়ে প্রভূত্বের মানসিকতায় প্রস্তুত করা ব্যুরোক্রেটিক ট্রাডিশনে পরিণত হয়েছে। যা ঔপনিবেশিক আমলাতন্ত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট হিসাবে বিবেচিত। ফলে যারা প্রশাসন ক্যাডারে নিয়োগ পান তাদের একটি ক্ষুদ্র অংশ ধরাকে সরা জ্ঞান করতে শুরু করেন এবং সেবার মানসিকতা পরিহার করে নিজেকে মনে করেন ÐমুÐের কর্তা হিসাবে। যা আমাদের গণমুখী ব্যুরোক্রেসীকে সাধারণ মানুষের কাছে আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে।

একশ্রেণির ব্যুরোক্রেটদের ক্ষমতার অবপব্যবহার নতুন কিছু নয়। সাম্প্রতিক সময়ে তা আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এমনই এক অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার অবতারণা করেছেন কুমিল্লার লালমাই উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ফোরকান এলাহী অনুপম। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, গত ১৩ অক্টোবর জুমাবার খুতবা শেষে ইউএনও-কে একটু সরে দাঁড়াতে বলাকে কেন্দ্র করে মসজিদের ইমামকে চাকরিচ্যুত করা হয়। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা শুরু হয়। পরে জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বিষয়টির সমাধান হয় বলে জানা গেছে। দুঃখ প্রকাশ করেন ইউএনও ফোরকান এলাহি অনুপম।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সেদিন নামাজ শেষে ইউএনও মসজিদের মুয়াজ্জিন ইমামকে পুকুরের পাড়ে ডেকে নেন। ঈমাম সাহেব ইউএনওকে না চেনার জন্য দুঃখও প্রকাশ করেন। কিন্তু নির্বাহী অফিসার এতে সন্তষ্ট হতে পারেন নি। তখন ইমামকে পানিতে চোবাবেন বলে হুমকী দেন। এরপর ইমামকে মসজিদের ইমামতি থেকে বাদ দেয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। বিষয়টি অতি তুচ্ছ হলেও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের ক্ষমতার দম্ভ অহমিকার কারণে পরিস্থিতি জটিল রূপ নেয়। ফলে বিষয়টির সুরাহা করতে জেলা প্রশাসককে হস্তক্ষেপ করতে হয়। যা সত্যিই অনাক্সিক্ষত অনভিপ্রেত।

দেশে কোন কিছু ঘটলেই এজন্য সরকারকে দায়ি করা হয়। এমনকি আমলা বা আইনশৃঙ্খলাবাহিনী কোন অপরাধ করলে তার পুরো দায় নিতে হয় সরকারকে। একশ্রেণির অসাধু, নৈতিকতাহীন অযোগ্য সরকারি কর্মকর্তার অত্যন্ত সুকৌশলে নিজেদের সকল অপকর্মের দায় চাপিয়ে দেন সরকারের ওপর। ভাবটা এমন যে, তারা সবকিছুই করেন সরকারের অঙ্গলী হেলনে। নিজেরা ধোয়া তুলসীপাতা। প্রসঙ্গে একজন সাবেক মন্ত্রীর বক্তব্য বেশ চমকপ্রদ।

তিনি এক জনসভায় খেদোক্তি করেই বলেছিলেন, ক্ষমতার পালাবদলের সাথে সাথে মন্ত্রীদেরকে দলে দলে জেলে যেতে হয়। Ðিতও হন অনেকে। কিন্তু অধরায় থেকে যান সকল অপকর্মের হোতা একশ্রেণির অসাধু, মূল্যবোধহীন অযোগ্য সরকারি কর্মকর্তা। তার এই বক্তব্য আমার মধ্যে কিছুটা হলেও বিরক্তির সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন পর তার কথা এখন  কেন জানি যৌক্তিক বাস্তবসম্মতই মনে হচ্ছে। তবে সরকারি কর্মকর্তাদের ওপর যে সরকারের খবরদাবি নেই এমন নয়। সেগুলো প্রায় ক্ষেত্রেই সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে হয়ে থাকে। কিন্তুইচকে চোর, ‘ফিচকে চোর আরসিঁদেল চোরধরার ক্ষেত্রে সরকারের কোন হস্তক্ষেপ আছে বলে মনে করার কোন সুযোগ নেই। সঙ্গত কারণেই আমলার দুর্নীতি নিয়ে রিপোর্ট করায় মন্ত্রণালয় কক্ষে সাংবাদিক নাজেহাল পুলিশ কর্তৃক পথচারির পকেটে মাদক ঢুকিয়ে দিয়ে হয়রানীর সাথে সরকারের কোন সম্পর্ক আছে বলে মনে হয় না।

নিকট অতীতে এমনই এক অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেছিল স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের অফিস কক্ষে। সেখানে প্রথম আলোর সিনিয়র প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে দীর্ঘ সময় ধরে আটকে রেখে নানা ভাবে নাজেহাল লাঞ্চিত করার ঘটনা ঘটেছিল। শেষ পর্যন্তঅফিসিয়াল সিক্রেটস এক্টস মামলাও দেয়া হয়েছিল তার বিরুদ্ধে। অভিযোগ অফিসের গোপনীয় নথি চুরি। কিন্তু প্রশ্ন হলো সরকারের গোপন নথি কি অফিসে প্রদর্শনীর জন্য রাখা হয়, না গোপনে সংরক্ষণ করা হয় ? সেখানে একজন বহিরাগত সাংবাদিক কীভাবে নথি চুরি করলেন আর সে সময় অফিসের কর্মকর্তা, কর্মচারি বা নিরাপত্তারক্ষীরা কোন কাজে ব্যস্ত তা কোন সুস্থ্যবিবেক সম্পন্ন মানুষের কাছে বোধগম্য নয়।

এই পুরো প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত ছিলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন সিনিয়র আমলা। যার বিরুদ্ধে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের গলা চেপে ধরার অভিযোগ গণমাধ্যমে সচিত্র প্রকাশিত হয়েছে। সাংবাদিক রোজিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ সত্য হলে অভিযুক্তকে দেশের প্রচলিত আইনে বিচারের সম্মুখীন করায় অধিক যুক্তিযুক্ত বা উত্তম সমাধান ছিল। কিন্তু তা না করে দীর্ঘ সময় তাকে অফিসে আটক রেখে বিভিন্নভাবে নাজেহাল একশ্রেণির আমলাদের শুধু অপেশাদারীই নয় বরং ফৌজদারি অপরাধও। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত দুর্নীতির প্রতিবেদন প্রকাশ করায় সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম লাঞ্চিত হয়রানীর শিকার হয়েছিলেন। নথি চুরি অভিযোগ কারো কাছেই বিশ^াসযোগ্য করে পারেন নি সংশ্লিষ্টরা।

আমলা কর্তৃক সাংবাদিক নিগ্রহের ঘটনা এটিই প্রথম নয় বরং এর আগেও এধরনের অনেক ঘটনা ঘটেছে। সরকারি কর্মকর্তাকেস্যারসম্বোধন না করায় সাংবাদিকরা অপদস্তের শিকার হয়েছেন। অথচ সংবিধান অনুযায়ি তারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারি। বিশে^ বিভিন্ন দেশে আমলারাই সাধারণ মানুষকেস্যারবলে সম্বোধন করার রেওয়াজ রয়েছে। উল্লেখ, কুড়িগ্রামের বাংলা ট্রিউবিউনের সাংবাদিক রিগ্যানকে মধ্যরাতে তার বাড়ি থেকে তুলে এনে কথিত মাদক গাঁজা রাখার অপরাধে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে সাজা দেয়ার ঘটনা সারাদেশেই বেশ চাঞ্চলের সৃষ্টি করেছিল। রিগ্যানকে শুধু সাজাই দেয়া হয়নি বরং মোবাইল কোর্ট সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট এবং তার সঙ্গীয় লোকজনরা তাকে ঘরের দরজা ভেঙে ব্যাপক মারধর করার পর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এনে মোবাইল কোর্ট বসিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সাজা দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

এই পুরো প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত ছিলেন স্থানীয় জেলা প্রশাসক। ঘটনায় কুড়িগ্রামের তৎকালীন জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্তে তার বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় তাকে কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসন থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। সাংবাদিক রিগ্যানের অপরাধ তিনি জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন খবরাখবর সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ করতেন। জেলা প্রশাসক একটি পুকুরের নাম নিজের নামে অন্যায়ভাবে করতে চেয়েছিলেন, যা তিনি করতে পারেন না। পুকুরের নামকরণের খবরাখবর সাংবাদিক রিগ্যান সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ করায় ডিসির রোষানলে পড়েন বলে জানা যায়। আর এতেই তিনি ভাগ্যবিড়ম্বর শিকার হয়েছিলেন। 

একশ্রেণির আমলারা জনপ্রশাসনে নিয়োগ পেয়ে ক্ষমতার দম্ভে ধরাকে সরা জ্ঞান করেন। আমরা ইতোপূর্বে ইউএনও কর্তৃক ব্যাংক কর্মকর্তাকে মারধর, মাস্ক ব্যবহার না করে অপরাধে ম্যাজিষ্ট্রেট কর্তৃক বাবার বয়সী ব্যক্তিকে কান ধরানো এবং এসিল্যান্ডদিদিসম্ভোধন করায় মাছ বিক্রেতাকে লাথি মারার ঘটনা গণমাধ্যমের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। এসব পুরো আমলাতন্ত্রকেই বিতর্কিত করেছে। আইন অনুযায়ি আমলারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারি হলেও তারা নিজেদেরকে জনগণের প্রভূ বলেই মনে করেন। ফলে পুরো আমলাতন্ত্রই এখন আসামীর কাঠগড়ায়। এদের কারণেইসিভিল সার্ভিসকে কাউকে কাউকেঈধঃঃষব ঝবৎারপববলে বিদ্রæ করতে শোনা যায়। অথচ আমলাতন্ত্রে সৎ, যোগ্য, মেধাবী, চৌকস প্রজ্ঞাবান কর্মকর্তার সংখ্যায় বেশি। কিন্তু তারা অসৎপ্রবণ স্বল্পসংখ্যক কর্মকর্তার কাছে জিম্মি।

মূলত, এক শ্রেণির আমলা দায়িত্ব পালনে কোন  ভাবেই পেশাদারিত্ব আইন-কানুনের ধার ধারেন না। এদের দায়িত্ব পালনে চরম স্বেচ্ছাচারিতা দায়িত্বহীনতা লক্ষ্য করা যায়। এমনই এক চমকপ্রদ ঘটনার অবতারণা হয়েছিল বগুড়ার আদমদীঘিতে জনউপদ্রবের অভিযোগে অভিযুক্ত করে ছাগলকে Ð দেয়ার ঘটনা। সূত্রমতে, ছাগল ফুলগাছ খাওয়ায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে জরিমানা করেছেন। ছাগল মালিকের অভিযোগ, তাঁর অনুপস্থিতিতে জরিমানা করে ছাগলটি স্থানীয় ইউএনও আটকে রাখার পর বিক্রি করে দিয়েছেন। যদিও বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে ইউএনও বলেছেন, জরিমানার টাকা দিয়ে মালিক ছাগলটি নিয়ে নিয়ে যেতে পারেন। তবে আইনজ্ঞদের ভাষ্য, ভ্রাম্যমাণ আদালতে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে শাস্তি দিতে হলে তাকে উপস্থিত থেকে দায় স্বীকার করতে হয়। পশুটিকে খোঁয়াড়ে দেওয়া ভালো সমাধান হতে পারত। কিন্তু ইউএনও সে সোজা পথে অগ্রসর না হয়ে ছাগলকে শাস্তি দিয়ে নিজের ক্ষমতার পরিধি জানিয়ে দিয়েছেন।

ছাগল মালিক অভিযোগ করেন, তিনি মানুষের কাছ থেকে জানতে পেরেছেন যে তাঁর ছাগলটি পাঁচ হাজার টাকায় ইউএনও বিক্রি করে দিয়েছেন। ইউএনওর বাসার গৃহকর্মী তাঁর বাসায় যান এবং তিন হাজার টাকা নিয়ে আসতে বলেন। তিন হাজার টাকা কেন আনবেন, জানতে চাইলে সাহারাকে ইউএনওর গৃহকর্মী বলেন যে ছাগলটি পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি করে জরিমানার দুই হাজার টাকা কেটে রাখা হয়েছে। ছাগল মালিক দাবি, তাঁর ছাগলটি উন্নত জাতের, যার বাজারমূল্য প্রায় ১২ হাজার টাকা।

বিষয়ে ইউএনও সীমা শারমিনের বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। তিনি দাবি করেন, ফুলগাছ খাওয়ায় জনউপদ্রব আইনে ভ্রাম্যমাণ আদালতে দুই হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অনেকবার ছাগলের মালিককে ডাকা হয়েছে, কিন্তু তিনি তা আমলে নেননি। কারণে সংশ্লিষ্ট আইনে দুই হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।  কিন্তু ইউএনও এই Ð দেয়াকে বিধিসম্মত মনে করেন না আইনজ্ঞরা। তারা এটিকে বেআইনী, ক্ষমতার অপব্যবহার আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত বলেই মনে করছেন।

আইন বিশেষজ্ঞের ভাষ্য হলো, কারো বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে হলে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে অবশ্যই সশরীরে উপস্থিত থাকতে হয়। অভিযুক্ত ব্যক্তি আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য দিতে পারেন, আবার দোষ স্বীকারও করতে পারেন। যদি দোষ স্বীকার করেন, তখন প্রচলিত আইন অনুযায়ী আদালত তাঁকে Ð দিতে দেয়া যেতে পারে। অভিযুক্ত ব্যক্তির অনুপস্থিতিতে বা দোষ স্বীকার ছাড়া কোনোক্রমেই ভ্রাম্যমাণ আদালতে দন্ড দেওয়া আইনসম্মত নয়। আদমদীঘির ইউএনও বাগানের ফুলগাছ খাওয়ার জন্য মালিকের অনুপস্থিতিতে ছাগল আটক করে কোনো ধরনের Ð দিয়ে থাকলে তা অবৈধ, বেআইনি, অনৈতিক অন্যায়। তারা বলছেন, জনউপদ্রবের অভিযোগ ছাগলের বিরুদ্ধে আনা যায় না। মালিকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হলে ছাগল খোঁয়াড়ে রেখে নির্দিষ্ট জরিমানা আদায় করা যুক্তিযুদ্ধ ছিল।

ঈমাম বা ধর্মীয় নেতারা আমাদের সমাজে খুবই সম্মানিত ব্যক্তি। ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল ধর্মের ধর্মীয় নেতা বা Ðিতদের সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শন করা হয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, কুমিল্লার লাইমাই উপজেলার ইউএনও এক্ষেত্রে সীমা লঙ্ঘন করেছেন। ঈমাম সাহেব কোন ত্রæটি করলে তাকে অফিসে ঢেকে নিয়ে যথাযথ সম্মান করেই তার সাথে কথা বলতে পারতেন। কিন্তু তা না করে তিনি তাকে পুকুর পাড়ে ঢেকে নিয়ে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছেন। এমনকি তাকে পানিতে চুবানোরও হুমকী দেওয়া হয়েছে। যা পুরো আমলাতন্ত্রেরই মর্যাদা হানী করেছে।

গত বছর সাতক্ষীরা কলারোয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা রুলী বিশ^াসও এমন অনাকাক্সিক্ষত দুঃখজনক ঘটনার অবতারণা করেছিলেন। তিনি খতিব কর্তৃক তাকে সালাম না দেওয়ার অভিযোগে তাকে ছাগল বে-আদব বলে গালমন্দ করেছিলেন। খতিব সাহেব তার বে-খেয়ালের কথা বললে প্রত্যুত্তরে ইউএনও বলেন, ‘আমরা চেহারা কি এতো ভাল যে আমার চেহারা দেখলে আপনি বেখাল হয়ে যান যা একজন নির্বাহী অফিসারে পদ সামাজিক মর্যাদার সাথে মোটেই সঙ্গতিপূর্ণ হয়। এমনকি তা শালীনতা বিবর্জিতও। বিষয়টি কিআপনি সব বসের বসএকথার দিকেই কি ইঙ্গিত বহন করে না? বিষয়ে রুলী বিশ^াস আর অনুপমদের বক্তব্যই বা কী ? কৌতুলহল তো আপনার-আমার সকলের।

মূলত, জনপ্রশাসনের অধিক সংখ্যক কর্মকর্তাই সৎ, যোগ্য, চৌকস, মেধাবী প্রজ্ঞাবান। তাই কোন আমলার স্বেচ্ছাচারিতা পেশাগত অসদাচারণের জন্য পুরো ব্যুরোক্রেসীকে দায়ি করার সুযোগ নেই। তবে যারা নিজেদের পদমর্যাদা দায়িত্বের প্রতি সুবিচার না করেই ক্ষমতার অপব্যবহার পেশাগত অসদাচারণ করছেন তাদেরকে হাত থেকে পুরো ব্যুরোক্রেসীকে মুক্ত করা সময়ের সবচেয়ে বড় দাবি। একজন দায়িত্বশীল প্রশাসনিক কর্তকর্তা কর্তৃক অতিতুচ্ছ কারণে ঈমাম-খতিব বা ধর্মীয় নেতা লাঞ্ছনাকেও স্বাভাবিকভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। কারণ, তারা সমাজের সবচাইতে সম্মানিত মর্যাদাবান ব্যক্তি। একথা কোন প্রশাসনিক কর্মকর্তার না বোঝা শুধু অনাকাক্সিক্ষতই নয় বরং দুর্ভাগ্যজনকও।

 

 


সৈয়দ মাসুদ মোস্তফা

মন্তব্য করুন