• , |
  • ঢাকা, বাংলাদেশ ।
সর্বশেষ নিউজ
* গাজা দখল ঠেকাতে মুসলিম বিশ্বকে ঐক্যের ডাক তুরস্কের * এসএসসি পরীক্ষার পুনঃনিরীক্ষণের ফল প্রকাশ * গাজায় ক্ষুধার যন্ত্রণায় আরও ১১ জনের মৃত্যু * গাজীপুরে ট্রেন লাইনচ্যুত, উত্তরবঙ্গের সঙ্গে চলাচল বন্ধ * ছাত্রসংগঠনগুলোর একসঙ্গে বসে বোঝাপড়া করা উচিত: উপদেষ্টা আসিফ * আদর্শ সমাজ ও প্রশাসন পরিচালনায় মরহুম শাহ আব্দুল হান্নান ও মরহুম এ জেড এম শামসুল আলমের জীবনাদর্শ শীর্ষক স্মৃতিচারণ সভা অনুষ্ঠিত * সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালানোর সময় আটক দিপু মনির ভাগনেসহ ৪ জন * ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা নেই যুক্তরাষ্ট্রের : জেডি ভ্যান্স * ঢাবি হলে বামদের কমিটি নিয়ে বিরোধিতা হয়নি, এখন কেন: ফরহাদ * ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন: সিইসি

তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ কী সমাগত?

news-details

ছবি: সংগৃহীত।


বিশ্বের দুই প্রান্তে দুই প্রান্তে দুটি ভয়াবহ যুদ্ধ চলছে। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বৃহৎ শক্তিগুলো পরস্পরকে নানা ধরনের হুমকি দিচ্ছে। এমনকি পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারেরও ইঙ্গিত দেয়া হচ্ছে।

বিশেষ করে গাজা ও লেবাননে ইসরাইলের গণহত্যা, ইয়েমেন, সিরিয়ায় বিমান হামলা, ইরানের মাটিতে হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া ও সর্বশেষ লেবাননের হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহকে হত্যার জবাবে ইরানের ক্ষেপনাস্ত্র ছোড়া নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধের শংকা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বিস্তারে এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ধনে তাইওয়ান ও জাপানের সঙ্গে চীনের  এবং উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ার ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশংকা করছে বিশ্বের শান্তিপ্রিয় মানুষ।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ হয় ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট জাপানের হিরোশিমা ও ৯ আগস্ট নাগাসিকা শহরে যুক্তরাষ্ট্রের ভয়াবহ পারমাণবিক হামলার পর।  পৈশাচিক ওই হামলার বিভীষিকা বিশ্বে একটি মারাত্মক সত্য নিয়ে আসে। এটি হল যে পরমাণু অস্ত্রধারী দেশগুলোর মধ্যে ভবিষ্যতের যে কোনো যুদ্ধ মানবতার জন্য ধ্বংসের কারণ হতে পারে।

বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন ভবিষ্যতবাণীতে বলেছিলেন, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ কোন অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ হবে তা জানি। কিন্তু চতুর্থ বিশ্বযুদ্ধ হতে পারে লাঠি ও পাথর।’তার এমন আশংকা এজন্য যে, পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহারে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যারা বেঁচে থাকবে তাদের অধিকাংশ হাত-পা হারিয়ে শারীরিক বিকলাঙ্গ হয়ে পড়বেন। ফলে তখন চতুর্থ বিশ্বযুদ্ধ হলে লাঠিসোটা ও পাথরের টুকরো ছাড়া অন্য কোনো অস্ত্র নিয়ে লড়াই করার মতো সক্ষমতা কারো থাকবে না । 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্ব দুই পারমাণবিক শক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে বিভক্ত হয়ে পড়ে। ১৯৯১ সালের ডিসেম্বরের শেষের দিকে  রাশিয়ার সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন পর্যন্ত দুই পরাশক্তির মধ্যে শীতল যুদ্ধাবস্থা চললেও একটি ভারসাম্য চলে। ওই বছর সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৫ স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়।  এরপর থেকে রাশিয়া আর্থিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়লে বিশ্বের একক মোড়লের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। ইরাকের স্বৈরশাসক সাদ্দাম হোসেরে কুয়েত দখলের সুযোগে মধ্যপ্রাচ্যে জেঁকে বসে যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা ইউরোপীয় মিত্ররা।

যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে বহুজাতিক বাহিনী সাদ্দামকে হটানোর নামে নির্বিচারে ইরাকে লাখ লাখ বেসামরিক হত্যা ও দেশটিকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করা হয়। ১৯৯১ ও ২০০১ সালে দুই দফায় সামরিক আগ্রাসন চালানোর মূল উদ্দেশ্য ছিল ইরাকের তেল সম্পদ লুট ও মধ্যপ্রাচ্যে গেড়ে বসে ইসরাইলকে সুরক্ষা দেয়া। এর প্রমাণ বিশ্ববাসী প্রতিদিনই দেখতে পাচ্ছে।

পশ্চিমাদের সামরিক শক্তিতে বলীয়ান ইসরাইল গাজা উপত্যাকায় একবছরের বেশি সময় ধরে গণহত্যা চালাচ্ছে। আর এই রক্ত পিপাসু ইসরাইলের সহায়তায় যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপীয় দেশগুলোর নিয়মিত বিমানবাহী রণতরী, হাজার টনি বোমা, আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘থাড’ ও সাবমেরিন পাঠানো।   

এদিকে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ ইউক্রেনের ওপরও ভর করেছে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা প্রেতাত্মারা। রাশিয়ার তার নিরাপত্তার স্বার্থে সাবেক অঙ্গরাজ্য ও বর্তমানে নিকট প্রতিবেশী রাষ্ট্র ইউক্রেনকে নিয়ে আমেরিকার কোনো ধরনের চাতুরি বরদাশত করবে না, করেওনি। ফলাফল, ২০২২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার  সামরিক অভিযান। পশ্চিমাদের সহযোগিতায় ইউক্রেনও রাশিয়ার মোকাবেলা শুরু করে। ফলে মূলত রাশিয়ার সঙ্গে পাশ্চিমাদেরই লড়াই চলছে।

আমরা কি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে যাচ্ছি?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও আগামী ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় রিপাবলিকান দলের প্রার্থী  ডোনাল্ড ট্রাম্প সতর্ক করেছেন যে, তিনি লক্ষ্য করেছেন চীন, রাশিয়া ও ইরানের ক্রমবর্ধমান হুমকি মোকাবেলায় ব্যর্থ ক্ষমতাসীন ডেমোক্র্যাটরা। ফলে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে তার দেশ বিশ্বযুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে। 

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় প্রতিরক্ষা কৌশল সম্পর্কিত দ্বিদলীয় কমিশন গত মাসে বলেছিল যে, নতুন অশুভ অক্ষ শক্তির ক্রমবর্ধমান হুমকি মোকাবেলায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই প্রতিরক্ষা ব্যয়কে শীতল যুদ্ধের স্তরে বৃদ্ধি করতে হবে। 

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল বলছে, তাইওয়ানের প্রতি চীনের শত্রুতা, ইরানের পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের বিশ্বব্যাপী ব্যর্থতার একটি ভয়ঙ্কর গল্প।

ফক্স নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুধুমাত্র জঙ্গি বা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী নয়, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে একটি বড় যুদ্ধের হুমকি, এবং ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরে প্রকাশ্য সংঘাতের সম্ভাবনাও একটি গুরুতর উদ্বেগের বিষয়"। 

মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান অবস্থা

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যাকায় ইহুদিবাদী অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইলের আগ্রাসনের এক বছর পার হওয়ার পর মধ্যপ্রাচ্য গত ১২ মাসের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি অস্থির হয়ে উঠেছে।

ইসরাইল এখনও তার ভূখণ্ডে ইরানের নজিরবিহীন ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রতিশোধ নেয়নি। ৩১ জুলাই ইরানের মাটিতে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের রাজনৈতিক প্রধান ইসমাইল হানিয়াকে গুপ্তহামলা চালিয়ে হত্যা ও সর্বশেষ ২৭ সেপ্টেম্বর লেবাননের হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরুল্লাহকে হত্যার বদলা হিসেবে ইরান গত ১ অক্টোবর ইসরাইলে অন্তত ২০০ ক্ষেপনাস্ত্র ছোড়ে।

এর আগে গত এপ্রিলে সিরিয়ায় ইরানি কনস্যুলেটে বিমান হামলা চালায় ইসরাইল। জবাবে গত ১৪ এপ্রিল ইসরাইলে তিন শতাধিক ক্ষেপনাস্ত্র ছোড়ে ইরান। এই ইরানের মাটি থেকে সরাসরি ইসরাইলে হামলার সাহস দেখায় দেশটি। এভাবে মূলত ইরানকে ছায়া যুদ্ধ থেকে সরাসরি লড়াইয়ের মাঠে নিয়ে আসে ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট।   

দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট বলেছে, মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে "মৈত্রী ও প্রতিদ্বন্দ্বিতার জটিল জালের" কারণে, ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে যে কোনো প্রত্যক্ষ দ্বন্দ্ব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি যুদ্ধে নিয়ে আসতে পারে।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য ক্রমবর্ধমান উদ্বিগ্ন যে, রাশিয়া ইরানের সাথে গোপন তথ্য এবং প্রযুক্তি ভাগ করে নিচ্ছে, যা দেশটিকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে সক্ষম হওয়ার কাছাকাছি নিয়ে আসতে পারে। বিনিময়ে তেহরান ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধের জন্য মস্কোকে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করে"। 

মিরর জানিয়েছে, ইরানের মিত্র রাশিয়া, উত্তর কোরিয়া এবং চীন ঘটনাগুলি দেখছে এবং ইউক্রেনের সংঘাতের কারণে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশংকা রয়েছে।

"অন্যরা বিশ্বাস করে যে এটি ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে - আধুনিক বিশ্লেষকরা যাকে 'হাইব্রিড ওয়ারফেয়ার' বলে অভিহিত করেন, এটি কেবল ভিন্ন দেখায়, 

তবে অনেকে বিশ্বাস করেন যে, যা শুধুমাত্র পরিখার মধ্যেই নয়, পর্দার আড়ালে, গোপন সামরিক অভিযান, অস্থিতিশীল মিশন, বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা, নির্বাচনী হস্তক্ষেপ এবং হ্যাকিং সহ নানা কারণে এরই মধ্যে বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে।  বিশ্লেষকরা যাকে 'হাইব্রিড ওয়ারফেয়ার' বলে অভিহিত করেছেন।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের শেষ কোথায়

১৯৪৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত ইউরোপে যত সংঘাত হয়েছে, তার মধ্যে ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ সবচেয়ে বিধ্বংসী সংঘাত। পশ্চিমের অনেকেই যখন এ যুদ্ধকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধ হিসেবে দেখছেন, তখন পুতিন বলেছেন, ২০০৮ সালে ন্যাটো ইউক্রেনকে সদস্য বানানোর বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, সেটি রাশিয়ার অস্তিত্বের জন্য হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছিল; সে কারণে রাশিয়া এ সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে।

অনেকে মনে করেন, শীতল যুদ্ধের সমাপ্তি এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর পশ্চিমারা রাশিয়াকে যথার্থ সমর্থন ও সহযোগিতা করতে ব্যর্থ হওয়াও আজকের অবস্থার পেছনের একটি বড় কারণ। কিন্তু ২০২২ সালের ২০ শুরু হওয়া এই যুদ্ধ আগামী কত বছর চলবে তা কেউ জানেনা। 

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা সমরাস্ত্র ও অর্থ সহায়তা দিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছে তেমনি রাশিয়ার পাশেও রয়েছে চীন , উত্তর কোরিয়া ও ইরান। রাশিয়াকে ড্রোন দিয়ে এ যুদ্ধে সহায়তা করছে ইরান। আবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কির অভিযোগ, উত্তর কোরিয়ার সেনারা রাশিয়ার হয়ে ইউক্রেন যুদ্ধে লড়ছেন।

ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, গত ১৩ অক্টোবর প্রকাশিত ভিডিও বার্তায় জেলেনস্কি বলেছেন, ‘রাশিয়ার সঙ্গে আরেক কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্র উত্তর কোরিয়ার সম্পর্ক দৃঢ় হচ্ছে। এই ঘনিষ্ঠতা কেবল অস্ত্র সরবরাহেই সীমাবদ্ধ নেই। বরং দখলদারদের (রাশিয়া) সশস্ত্র বাহিনীতে লোকবল দিয়েও সহায়তা করছে উত্তর কোরিয়া।’

জেলেনস্কি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন যে রাশিয়ার আগ্রাসন প্রতিহত করতে ব্যর্থ হলে ন্যাটোর সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়তে পারে দেশটি। "এবং এর অর্থ অবশ্যই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ।" 

রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে ইউক্রেনের আক্রমণ এবং তার পশ্চিমা মিত্রদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি পুনর্নবীকরণ সত্ত্বেও, রাশিয়ান সৈন্যরা পূর্ব ইউক্রেনে ধীর কিন্তু অবিচলিত লাভ অব্যাহত রেখেছে। ফলস্বরূপ, ওয়াশিংটন পোস্ট সতর্ক করেছে ইউক্রেন "রক্তপাতের" ঝুঁকিতে রয়েছে। এটির "অনির্দিষ্টকালের যুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য যথেষ্ট সৈন্য নেই" এবং "একটি শালীন মীমাংসা করার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী হতে হবে"।

ইউক্রেন রাশিয়ার ভূখণ্ডে আক্রমণ করার জন্য পশ্চিমা অস্ত্র ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে, এমন একটি পদক্ষেপ যা রাশিয়া এবং ন্যাটোর মধ্যে সরাসরি সংঘর্ষের ঝুঁকি তৈরি করে, যা এই বছরের শুরুর দিকে পুতিনের ভাষায়, "এক ধাপ দূরে একটি পূর্ণ-স্কেল বিশ্বযুদ্ধ তৃতীয় হতে পারে।"

গত সপ্তাহে হাঙ্গেরির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পিটার সিজ্জার্তো হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন যে ইউক্রেনের জন্য ন্যাটো সদস্যপদ তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্ম দেবে।

স্কাই নিউজের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ডমিনিক ওয়াঘর্ন বলেছেন, "যদি পুতিন শেষ পর্যন্ত ইউক্রেনে বিজয়ী হন, তবে তিনি "প্রায় নিশ্চিতভাবেই তার ভাগ্য চেষ্টা করবেন" স্কাই নিউজের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক - "কারণ তিনি ধরে নেবেন যে জোটটি তাকে থামাতে খুব মেরুদন্ডহীন"। নভেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিতলে ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকাকে ন্যাটো থেকে প্রত্যাহার করার হুমকি দিয়ে চললে এই দৃষ্টিভঙ্গি আরও জোরদার হবে।

এদিকে, দ্য টেলিগ্রাফে ডঃ স্যামুয়েল রামানি বলেছেন, মস্কোর "ইউরোপে মার্কিন মিত্রদের প্রতি প্রচলিত এবং হাইব্রিড হুমকি দিন দিন তীব্রতর হচ্ছে", এবং মার্কিন নির্বাচন বা তাদের পরবর্তী ঝুঁকিতে "দুর্ঘটনাজনিত সংঘর্ষের" আশঙ্কা "খুব খারাপ" দৃশ্যকল্প: একটি "নতুন বিশ্বযুদ্ধ"।

চীন-তাইওয়ান উত্তেজনা ও যুক্তরাষ্ট

দীর্ঘদিন ধরে ধরে নেওয়া হয়েছে যে ভূ-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হল সাম্প্রতিক বছরগুলিতে চীন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা, বিশেষ করে তাইওয়ানের সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন নিয়ে।

বেইজিং দ্বীপ দেশটিকে একটি ঐক্যবদ্ধ চীনা ভূখণ্ডের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে দেখে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, এটি দ্বীপ এবং এর ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেটিক প্রগ্রেসিভ পার্টির (ডিপিপি) প্রতি ক্রমবর্ধমান আক্রমনাত্মক অবস্থান গ্রহণ করেছে, যা এটি বিপজ্জনক বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসাবে নিন্দা করেছে, তবে যারা এই বছরের শুরুতে অভূতপূর্ব তৃতীয় মেয়াদে জিতেছে। একই সময়ে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের অব্যাহত স্বাধীনতার জন্য আর্থিকভাবে, সামরিকভাবে এবং অলংকারিকভাবে তার সমর্থন বাড়িয়েছে।

বেইজিং সোমবার দ্বীপের কাছে নতুন সামরিক মহড়া শুরু করেছে যা তাইওয়ানের রাষ্ট্রপতি উইলিয়াম লাইয়ের দেওয়া বক্তৃতার জন্য "শাস্তি" হিসাবে বর্ণনা করেছে, যখন তিনি "অধিভুক্তি প্রতিরোধ" বা "আমাদের সার্বভৌমত্বের উপর দখল" করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

স্কাই নিউজ বলেছে, চীন বলেছে যে এই পদক্ষেপটি "তাইওয়ানের স্বাধীনতা বাহিনীগুলির বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপের প্রতি কঠোর সতর্কতা" প্রতিনিধিত্ব করে, এশিয়ায় "টেনশন" বাড়ায় এবং এটি একটি বিপজ্জনক অগ্রদূত হতে পারে।

এই বছরের শুরুতে, ইন্দো-প্যাসিফিকের শীর্ষ মার্কিন সামরিক কমান্ডার বলেছিলেন যে বেইজিং ২০২৭ সালের মধ্যে তাইওয়ান আক্রমণ করতে সক্ষম হওয়ার লক্ষ্য বজায় রাখছে। অ্যাডমিরাল জন অ্যাকুইলিনো ইউএস হাউস আর্মড সার্ভিসেস কমিটিকে বলেছিলেন যে চীন তার পিপলস লিবারেশন আর্মি  (পিএলএ) তৈরি করতে চায়। পিএলএ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে "একটি স্কেলে দেখা যায়নি"।

লন্ডন ইভিনিং স্ট্যান্ডার্ডে রবার্ট ফক্স বলেছেন, ২০২৭ সালকে "জাদুকর" হিসেবে দেখা হয় কারণ এটি পিএলএর শতবর্ষকে চিহ্নিত করে ৷ এই বার্ষিকী বেইজিংয়ের একটি গুরুতর সামরিক অভিযানের সাথে মিলে যেতে পারে এমন ধারণা ওয়াশিংটনে একটি "নির্ধারণ" হয়ে গেছে, ডিফেন্স নিউজ বলেছে। এটি "চীন নীতি নিয়ে বিতর্ককে প্রভাবিত করেছে - দীর্ঘমেয়াদী থেকে স্বল্পমেয়াদে একটি স্থানান্তর" পাশাপাশি প্রশান্ত মহাসাগরে মার্কিন বাহিনীর প্রতি বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার পরিচালনা করতে সহায়তা করেছে।

দ্য গার্ডিয়ানের অর্থনীতি সম্পাদক ল্যারি এলিয়ট বলেছেন, মানবিক খরচ বাদ দিয়ে, বিশ্বের দুটি বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে একটি সামরিক সংঘাত "বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খল বিচ্ছিন্ন, আত্মবিশ্বাসের উপর আঘাত এবং সম্পদের মূল্য হ্রাস" হতে পারে। "এটির বিপর্যয়কর অর্থনৈতিক পরিণতি হবে, দ্বিতীয় গ্রেট ডিপ্রেশন পর্যন্ত এবং সহ।"

উত্তর কোরিয়া-দক্ষিণ কোরিয়া উত্তেজনা

স্কাই নিউজ এক প্রতিবেদনে বলেছে, ২০১৯ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে আলোচনা পিয়ংইয়ং-এর উপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে মতবিরোধের কারণে ভেঙ্গে যাওয়ার পর, কিম জং উন "তার পারমাণবিক এবং ক্ষেপণাস্ত্র অস্ত্রাগার আধুনিকীকরণে মনোনিবেশ করেছেন"।

নববর্ষের আগের ভাষণে তিনি সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের কর্মকাণ্ড কোরীয় উপদ্বীপকে পারমাণবিক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিয়েছে। এবং তিনি ঘোষণা করেছিলেন যে সন্ন্যাসী রাজ্য "প্রতিদ্বন্দ্বী দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে পুনর্মিলনের অস্তিত্বের লক্ষ্য" ত্যাগ করেছে, অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস বলেছে।

যদিও তখন থেকে উত্তর থেকে দক্ষিণে কোনো সরাসরি সামরিক অভিযান শুরু হয়নি, সেখানে উত্তেজনা বাড়ছে। এই বছরের শুরুর দিকে, দুই পক্ষ একটি "টিট-ফর-ট্যাট" বেলুন যুদ্ধে জড়িত ছিল। দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, জুন মাসে উত্তর কোরিয়া আবর্জনা ও বর্জ্যে ভরা ২০০টি বেলুন ভাসিয়েছিল। এটি দক্ষিণের "অ্যাক্টিভিস্টদের" প্রতিক্রিয়া হিসেবে ছিল, যারা উত্তরে "তাদের গণতান্ত্রিক সমাজ এবং মেমরি ডিভাইসের সাথে কে-পপ মিউজিক ভিডিও সহ প্রচারমূলক উপাদান বহন করে" বেলুন পাঠাচ্ছে।

দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট আরও বলেছে, ক্রমবর্ধমান শত্রুতা ইতিমধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে আরও জড়িত হতে দেখেছে, জুন মাসে উপদ্বীপ বরাবর "উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে সতর্কতা" হিসেবে প্রথমবারের মতো "সিউলের সাথে নির্ভুল-নির্দেশিত বোমা হামলা" পরিচালনা করেছে।

তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশংকা কতটুকু

মধ্যপ্রাচ্যে প্রায় সর্বাত্মক ও ইউরোপে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ভয়াবহতা দিন দিন বাড়ছে। বিশ্বের দুই প্রান্তে চলমান এই দুটি যুদ্ধে পক্ষ-বিপক্ষ জোটও প্রায় একই। কবে এই দুটি প্রান্তে যুদ্ধ শেষ হবে তা কেউ না জানলেও কোটি কোটি বেসামরিক মানুষ যে বলি হতেই থাকবে তা বলাই বাহুল্য। এছাড়া চীন-তাইওয়ান ও উত্তর-দক্ষিণ কোরিয়ার উত্তেজনার বারুদেও যে কোনো সময় বিস্ফোরণ ঘটতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্র ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা ইহুদিবাদী ইসরাইলকে দিয়ে ইরান তথা গোটা মধ্যপ্রাচ্যকে দমন করার পাশাপাশি রাশিয়াকে দুর্বল করতে ইউক্রেন এবং চীন ও উত্তর কোরিয়ার বিপক্ষে তাইওয়ান-দক্ষিণ কোরিয়াকে রসদ যোগাচ্ছে। পুতিনও চাইবেন ইউক্রেনের পক্ষ নেওয়া দেশগুলোকেও শায়েস্তা করতে। ফলে বিশ্বের শান্তিকামী মানুষের দরজায় কড়া নাড়ছে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ। যুদ্ধ এখন বাস্তবতা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আরেক বড় যুদ্ধ সমাগত। 


সরদার একরাম

মন্তব্য করুন