ছবি: ইন্টার নেট
মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্তের জন্য বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে ঢাকা শহর। এ শ্রেণির নাগরিকরা দৈনন্দিন ব্যয় নির্বাহ করতে মাথার ঘাম পায়ে ফেলেও কোনো কুল কিনারা পাচ্ছেন না। প্রায় সকলে একাধিক চাকরি বা ব্যবসাও করছেন। অনেকে মূল পেশার পাশাপাশি টুকটাক ব্যবসা, হোম ডেলিভারি, মধু-তেল-খেজুর ইত্যাদি সরবরাহ করে বাড়তি ৫-৭ হাজার টাকা আয়ের জন্য পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। শিক্ষকরা রাত ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত টিউশনি করছেন। অন্যান্য পেশায় যাদের বেতন ১৫-২০ হাজারের আশপাশে তারাও অনেকে টিউশনি করে কিছুটা কাভার দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
এসব ছোটখাটো কাজ করতে গিয়ে নিজের কাছে নিজে অবাক হচ্ছেন। লজ্জিত হচ্ছেন। পরিচিত মহলে হচ্ছেন ছোট। অতীতের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার ও ব্যক্তিত্ব বিসর্জন দিয়ে জীবন সংগ্রামে লিপ্ত এসব মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ ঢাকা শহরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। পারছেন না অটোরিকশা চালাতে বা সবজি বিক্রি করতে অথবা মানুষের নিকট হাত পাততে।পরিবারের কর্তা পুরুষ ব্যক্তিটি যা আয় করছেন তা দিয়ে চাল-ডাল, তেল-সবজি ইত্যাদি ক্রয়, স্ত্রী-সন্তানের পোশাক ক্রয় এবং তাদের পড়াশোনাতেই সব শেষ হয়ে যাচ্ছে। বাড়তি কোন কিছু করা সম্ভব হচ্ছে না। সংসার চালাতে অনেক পরিবারের নারী-পুরুষ উভয়কেই আয়ের সন্ধানে নামতে হয়েছে। নিম্ন মধ্যবিত্তের অনেককে বাচ্চাদের পড়াশোনা বন্ধ করে দিতে হয়েছে! নিয়মিত খরচটা খেয়ে-না খেয়ে কোনোভাবে চালানো গেলেও মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে দেখা দেয় যখন পরিবারের কোন সদস্য অসুস্থ হয়ে যায়। ডাক্তার দেখাতে ও আনুষঙ্গিকতায় যদি ৫-১০ হাজার টাকাও খরচ হয় তা ম্যানেজ করতে হিমসিম খেতে হয়। এ খরচ যদি ২০-৩০ হাজার বা তার চেয়ে বেশি হয় তবে তো রীতিমতো নিকটজনের শরণাপন্ন হতে হয়, হাত পাততে হয়। এখানেঅধিক কষ্টের বিষয়টি হচ্ছে- নিকটজনরা বুঝতে চান না বা বুঝতে পারেন না যে, ঢাকা শহরে একজন সাধারণ চাকরিজীবীর পক্ষে অতিরিক্ত ২০-৩০ হাজার টাকা ম্যানেজ করা কতটা অসাধ্য ব্যাপার। যারা গ্রামে থাকেন তাদের সবচেয়ে বড় সুবিধার দিক হলো- বাসা ভাড়া দিতে হয় না। ঘরে ২-৪ দিন বাজারের তরিতরকারি না থাকলেও রান্না বন্ধ থাকবে না। লতাপাতা, শাক-সবজি আশপাশের জমিজমা ও ডোবানালা থেকে সংগ্রহ করে রান্না চালিয়ে নেওয়া সম্ভব। কিন্তু ঢাকা শহরে তা সম্ভব নয়। খাবার পানি ও কচু শাক পর্যন্ত এখানে কিনে খেতে হয়। গ্রামে যা অকল্পনীয়। সুতরাং সংকটকালীন ১০-২০ হাজার টাকা যদি বৃহত্তর পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের কাছ থেকে আসে বা বৃহত্তর পরিবারের সদস্যরা সমন্বয় করে ২-৩ জনে মিলে টাকাটা সংগ্রহ করে দেন তবে তা অন্ধকে পথ দেখানোর মতোই মহৎ কাজ হবে। এক্ষেত্রে বৃহত্তর পরিবারের কর্তাকে হতে হবে আন্তরিক, বিচক্ষণ এবং প্রধান সমন্বয়ক।
এবার এ প্রসঙ্গে একটি প্রস্তাবনা উপস্থাপন করা যায়। সাধারণত আমাদের সমাজে পিতার মৃত্যুর পর সন্তানদের মাঝে সম্পত্তি ভাগাভাগি হয়। কিন্তু এ বিষয়টি মোটেও সমীচীন নয়। এতে বেইনসাফি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সম্পত্তির পুরোটা বা আংশিক আগেই ভাগাভাগি করে দেওয়া উচিত। তবে তা অবশ্যই বাবা-মায়ের অংশ ব্যতিরেকে। আমৃত্যু যেন কোনো বাবা-মাকে সন্তানদের উপর নির্ভর করতে না হয় তা প্রথমে নিশ্চিত করা জরুরি। তারপর একটা নির্দিষ্ট অংশ সন্তানরা ভাগ করে নিবে। অতঃপর স্ব স্ব অংশ তারা নিজেরা বা কাউকে দিয়ে আবাদ করাবে অথবা বাৎসরিক টাকার বিনিময়ে লিজ দিবে। মোটকথা তার ভাগের অংশ কাজে লাগিয়ে একটা আর্থিক সমর্থন পাবে, যা তার (বিশেষত বাড়ির বাহিরে যারা থাকেন) সংসার চালাতে দারুণ সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। বিশেষত ঢাকাস্থ মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ যদি পরিবার থেকে এ ধরনের একটা সাপোর্ট মাসে বা কয়েকমাস অন্তর পায় তবে তা আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়ার মতোই হবে। আমি কয়েকটি পরিবার স্টাডি করে এ মতামত দিলাম। যুক্তিগুলো নিম্নরূপঃ
১. মানুষ বার্ধক্যের দিকে এগুতে থাকলে তার কর্মক্ষমতা ও হিতাহিতজ্ঞান কমতে থাকে। সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে ভুল বেশি হয়। তাই কিছুটা কর্মক্ষম থাকা অবস্থায়ই পিতা-মাতার উচিত সন্তানদের হাতে সংসারের চাবিকাঠি তুলে দেওয়া।
২. বৃদ্ধ পিতা-মাতার কাছে অধিক সম্পদ থাকলে তাতে অপচয় ও অপব্যয় বেশি হয়। সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণের জন্যও বয়সটা গুরুত্বপূর্ণ।
৩. পিতামাতা বৃদ্ধ হয়ে গেলে বিপথগামী(যদি থাকে) সন্তানরা বোন ও অন্যান্য ভাইদের বঞ্চিত করে পিতার সম্পত্তি নিজেদের নামে লিখে নেয়। পিতামাতা সুস্থ ও কর্মক্ষম থাকা অবস্থায় সম্পত্তি ভাগাভাগি করে দিলে এ ধরনের বেইনসাফির আশঙ্কা থাকে না।
৪. সন্তানদের পরিবার(বিয়ে-সন্তান) হয়ে যাওয়ার পর এবং তাদের বয়স ৪০-৪৫ হওয়ার পরও যদি পৈতৃক সম্পত্তি থেকে কোনো সহযোগিতা না আসে তবে কখন আসবে? জীবন সংগ্রামের মূল যুদ্ধকালীন সময়েই পারিবারিক সহযোগিতা অধিক প্রয়োজন।
সুতরাং কোনো একক সিদ্ধান্ত নয়, নয় কোন বাড়াবাড়ি বা একগুঁয়েমি। পরিবারের সবাই একত্রে বসে খোলামেলা আলোচনার মাধ্যমে উত্তম অপশনটি বেছে নিতে হবে। হতে পারে এই প্রক্রিয়ায় সবাই ভালো থাকবে।
জোবায়ের হাসান
, 03 July, 2024 12:15 PM
অনেক ধন্যবাদ