প্রতীকী ছবি
গত ১২ই অক্টোবর বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে সিইসি সরাসরি বিএনপি’র নাম উল্লেখ করে বলেন, ‘বিভিন্ন ছোটখাটো দল নির্বাচনে অংশ নিলেও তারা বিএনপি’র সমকক্ষ নয়।’ বিএনপি অংশগ্রহণ না করলে নির্বাচন অসম্পূর্ণ থেকে যেতে পারে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। এদিকে, বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাওয়ার কথা জানিয়ে অতি সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডনাল্ড লু দেশের প্রধান তিন রাজনৈতিক দল- আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিকে চিঠি দিয়েছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ওই চিঠির মাধ্যমে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে শর্তহীন সংলাপে উৎসাহিত করার পাশাপাশি বিএনপি ছাড়া যেকোনোভাবেই ‘অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন’ সম্ভব নয় সেই বার্তাও সংশ্লিষ্ট মহলকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু বুধবার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনিশ্চিত জেনেও সিইসি তফসিল ঘোষণা করেছেন।
আজ থেকে ঠিক চার মাস আগে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং প্রভাবশালী মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, বিদেশিরা নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়, অংশগ্রহণমূলক হতে হবে বলেনি (সূত্র: বিডিনিউজ, ১৪ই জুলাই, ২০২৩)। কাদের এমন দাবি করলেও বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে কথা বলে আসা বিদেশিরাই শুধু নন, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা এমনকি সংশ্লিষ্ট দেশিরাও বার বার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের আহ্বান জানাচ্ছেন। আর, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বলতে যে ‘দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যেতে অনড়’ রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি’র অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার কথা বলা হচ্ছে তাও বোঝা গেছে বিভিন্ন সময়ে দেয়া তাদের বক্তব্যে।
যেমন- ‘কাদেরের দাবির’ সপ্তাহ দুয়েক পর (৩১শে জুলাই) নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মহাসচিবের উপ-মুখপাত্র ফারহান হক জানিয়েছিলেন, জাতিসংঘ বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ, গ্রহণযোগ্য ও সব দলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করে।
এমনকি ‘কাদেরের দাবির’ মাত্র ৪০ দিন পর (২৪শে আগস্ট) জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইসের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে কাদের নিজেই সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হোক, জাতিসংঘ এটা চায়’। ‘কাদেরের দাবির’ ঠিক পাঁচ মাস আগে (১৬ই ফেব্রুয়ারি) ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)’র সাতটি দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের কাদের নিজেই জানান, ‘ইইউ বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেখতে চায়।’ এমনকি বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ইইউ’র আকাক্সক্ষার কথা ব্যক্ত করে কাদের এটাও বলেন, ‘তারা চায়, আগামী নির্বাচনে বিএনপিসহ সব দল অংশগ্রহণ করবে।’ (সূত্র: প্রথম আলো)।
‘কাদেরের দাবির’ মাস তিনেক পর (অক্টোবরের শুরুতে) ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউট (এনডিআই) ও ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই)-এর সমন্বয়ে গঠিত যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল বাংলাদেশ সফর করেছিল। পাঁচ দিনের মিশন শেষে ‘বিশ্বাসযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক ও সহিংসতামুক্ত’ নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তারা বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে অর্থবহ সংলাপে বসতে বলেছিল। মার্কিন ওই প্রতিনিধিদল ঢাকায় অবস্থানকালেই (৯ই অক্টোবর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার কার্যালয়ে সাক্ষাৎকালে সুইডেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগিতা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ডায়ানা জানসে বলেন, তার দেশ বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায় (সূত্র: মানবজমিন)।
‘কাদেরের দাবির’ সাড়ে তিন মাস এবং ২৮শে অক্টোবরের ঘটনার মাত্র দু’দিন পর (৩০শে অক্টোবর) এক যৌথ বিবৃতিতে ঢাকাস্থ অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, নরওয়ে, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে সংযম প্রদর্শন, সহিংসতা পরিহার এবং অংশগ্রহণমূলক, শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছিল। এর আগে (২৬শে অক্টোবর) অস্ট্রেলিয়ার প্রভাবশালী সিনেটর ডেভিড শুব্রিজের এক প্রশ্নের জবাবে দেশটির বৈদেশিক বিষয়ক ও বাণিজ্য বিভাগের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রথম সহকারী সচিব (প্রধান) গ্যারি কেওয়েন নিশ্চিত করেন, ‘বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও অহিংসভাবে অনুষ্ঠিত হওয়ার জন্য ধারাবাহিকভাবে কথা বলছে অস্ট্রেলিয়া’ (সূত্র: মানবজমিন)।
অতি সম্প্রতি (৫ই নভেম্বর) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে করা এক পোস্টে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক শীর্ষ কর্মকর্তা জোসেফ বরেল ‘বাংলাদেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতার জন্য সহায়ক অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য শান্তিপূর্ণ পথ খুঁজে পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ’ বলে মন্তব্য করেছেন।
পরে জোসেফ বরেলের এ বক্তব্যের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস নিজেদের অফিসিয়াল এক্স হ্যান্ডলে লিখেছে ‘আমরাও একমত।’
কিছুদিন আগে আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং জাতীয় পার্টির নেতাদের সঙ্গে স্বল্পতম সময়ের ব্যবধানে পৃথক পৃথক বৈঠক করে ‘অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের’ আহ্বান জানান ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার সারাহ কুক। অতীতে বাংলাদেশে কাজ করার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ঝানু এই কূটনীতিক অবশ্য হাইকমিশনার হিসেবে বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখার পর নির্বাচন সংশ্লিষ্ট প্রতিটি বক্তব্যেই অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের তাগিদ দিয়ে যাচ্ছিলেন। এমনকি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পক্ষে যুক্তরাজ্য প্রয়োজনে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে রাজি বলেও জানানো হয়েছিল। যুক্তরাজ্যের স্থায়ী আন্ডার সেক্রেটারি ফিলিপ বার্টন সেপ্টেম্বরে ঢাকায় অনুষ্ঠিত দুই দেশের অংশীদারিত্ব সংলাপে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনকে এ প্রস্তাব দিয়েছিলেন৷ বিষয়টি নিশ্চিত করে পররাষ্ট্র সচিব তখন বলেছিলেন, ‘তারা যেহেতু পুরনো বন্ধু, অনেকদিনের উন্নয়ন অংশীদারÑ নির্বাচনের ব্যাপারে তাদের আগ্রহ রয়েছে। তারা একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও সহিংসতামুক্ত নির্বাচন দেখতে চায়, সেখানে যাতে সবাই অংশগ্রহণ করে (সূত্র: প্রথম আলো)।
যাই হোক। এগুলো সবই ছিল নির্বাচনে অংশগ্রহণমূলক করা বিষয়ে অতি সাম্প্রতিককালে বিদেশিদের বক্তব্য, আহ্বান কিংবা তাগিদ। ওবায়দুল কাদের যতই বলুন ‘বিদেশিরা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হতে হবে বলেনি’, বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে এ ধরনের বক্তব্য বিদেশিরা গত এক দশক ধরেই দিয়ে আসছে। কেবল বিদেশিরা লিখলেও ভুল হবে। আওয়ামী লীগ ছাড়া সকল রাজনৈতিক দল, এমনকি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট সঙ্গী ১৪ দলের নেতারাও বিভিন্ন সময়ে সরাসরি কিংবা আকারে-ইঙ্গিতে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তার কথা স্বীকার করেছেন, ক্ষেত্রবিশেষে তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।
উদাহরণস্বরূপ: এই সেদিন (১২ই নভেম্বর) নবগঠিত রাজনৈতিক দল প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক ফোরামের প্রথম কনভেনশনের প্রধান অতিথি বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি’র পাশে দাঁড়িয়ে তৃণমূল বিএনপি’র মহাসচিব তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, ‘আমরা একটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাই, যে নির্বাচনে সব দল অংশ নেবে।’ গত মঙ্গলবার গণফোরামের ইমেরিটাস সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, তিনি জাতীয় সংলাপের মধ্যদিয়ে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চান। একইদিনে ‘গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখতে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিতের পক্ষে’ অবস্থান জানিয়েছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদও (সূত্র: প্রথম আলো)।
এমনকি নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত সর্বোচ্চ শীর্ষ কর্তা ব্যক্তি- প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বেশ কয়েকবার প্রকাশ্যেই অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তার কথা স্বীকার করেছেন। যেমন: গত বছরের ২১শে জুলাই জাতীয় পার্টির সঙ্গে সংলাপে ‘জাতির স্বার্থে দেশে অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচন অনিবার্যভাবে প্রয়োজন’ বলে তিনি মন্তব্য করেছিলেন (সূত্র: ভোরের পাতা)। গত ২৬শে ফেব্রুয়ারি পাবনার ঈশ্বরদীতে এক কর্মশালা শেষে তিনি বলেছিলেন, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন না হলে বিতর্ক সৃষ্টি হতে পারে (সূত্র: নয়াদিগন্ত)। এ ছাড়াও, গত ১০ই অক্টোবর নির্বাচন ভবনে ইসি’র সঙ্গে বৈঠক করে মার্কিন প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল। ওই বৈঠকে আলোচনার মূল বিষয় অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন ছিল বলে নিজেই নিশ্চিত করেছিলেন সিইসি। এর আগে (৪ঠা অক্টোবর) নির্বাচন ভবনে ইলেকশন মনিটরিং ফোরাম (ইএমএফ)’র সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘জাতীয় নির্বাচন যদি অংশগ্রহণমূলক না হয় তবে ইভিএম কিংবা ব্যালট পেপার কোনোটাতেই সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তা নেই’ (সূত্র: বাংলা ইনসাইডার)। তারও অনেক আগে (২৭শে আগস্ট) যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনারের সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি জানিয়েছিলেন, ‘যুক্তরাজ্য বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায়।’
ওদিকে, একাদশ জাতীয় সংসদের শেষ অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে (২রা নভেম্বর) বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ বলেছেন, ‘নির্বাচন অবশ্যই সুষ্ঠু হতে হবে। অবশ্যই গ্রহণযোগ্য হতে হবে। অবশ্যই অংশগ্রহণমূলক হতে হবে। এটা আমরা সবাই চাই। সেটা আমাদের সবার লক্ষ্য। আশা করছি, সবার অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হবে।’ (সূত্র: আজকের পত্রিকা)। এর ঠিক এক সপ্তাহ পর রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সিইসি’র নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশনের একটি প্রতিনিধিদল সাক্ষাৎ করতে গেলে ‘সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করে’ বলে মন্তব্য করেছিলেন রাষ্ট্রপতি (সূত্র: ইত্তেফাক)।
উপরোক্ত সকল বক্তব্য থেকে বোঝা গেল দেশি-বিদেশি সকল পক্ষ তথা সংশ্লিষ্ট সব মহলই মনে করেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হতে হলে নির্বাচন অবশ্যই অংশগ্রহণমূলক হতে হবে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে, ‘অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন’ বলতে কি বোঝায়? সাধারণভাবে, সকল বড় রাজনৈতিক দল বা যেসব দলের পেছনে ভোটারদের একটি বড় অংশের জনসমর্থন রয়েছে, তাদের অংশগ্রহণে (অবাধ প্রচার-প্রচারণার সুযোগ বা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করে) সমাজের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ নিরাপদে ভোট দিতে পারলেই তাকে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বলা হয়ে থাকে। সে হিসেবে দেশের দুই প্রধান দলের একটি, রাজপথের প্রধান বিরোধী দল, বেশ কয়েকবার নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করা (আওয়ামী লীগের পর সবচেয়ে বেশি সময় রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকা) দল বিএনপিকে ছাড়া নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে সে নির্বাচনকে যেকোনোভাবেই অংশগ্রহণমূলক বলা যাবে না একথা সবাই জানেন।
কিন্তু, গত আগস্টে ‘জনগণ ভোট দিতে পারলেই সেটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে’ বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্তব্য করলে বিষয়টি নিয়ে অনেকেই বিতর্ক শুরু করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘আমার কাছে অংশগ্রহণ হচ্ছে জনগণের অংশগ্রহণ। জনগণ ভোট দেবে। সেই ভোটে যারা জয়ী হবে, তারা সরকারে আসবে।’ বিরোধী দলের (বিএনপি) অংশগ্রহণ প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা কি জনগণ চায়? তারা অংশগ্রহণ করলেই বৈধ (নির্বাচন) হবে। আর অন্য কেউ করলে হবে না, এটা তো হতে পারে না।’ তিনি বলেন, ‘যতগুলো উপনির্বাচন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলো, জনগণ কি অংশগ্রহণ করেনি? অংশগ্রহণ তো করেছে। সেটাই তো অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হলো।’
প্রধানমন্ত্রী এমন কথা বললেও বিএনপি’র অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচনকে যে অংশগ্রহণমূলক বলা যাবে না সেটা নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলের বক্তব্য থেকেই সুস্পষ্ট। গত ৪ঠা অক্টোবর নির্বাচন ভবনে এক কর্মশালায় অংশ নিয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম বলেন, ‘ভোটের পরিবেশ ঠিক করতে হবে। ভোট অংশগ্রহণমূলক হতে হবে। তবে প্রধান বিরোধী দল না এলে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে না’ (সূত্র: যুগান্তর)। চলতি মাসের শুরুতে নির্বাচন কমিশন আয়োজিত সংলাপে বিকল্পধারার মহাসচিব, জ্যেষ্ঠ রাজনীতিবিদ মেজর (অব.) আব্দুল মান্নান বলেছিলেন, ‘একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করার পাশাপাশি, সব দল যেন অংশগ্রহণ করে নির্বাচন কমিশনকে সেই দায়িত্বটাও নিতে হবে’ (সূত্র: বাংলানিউজ)।
শুধু তাই নয়, গত মাসে (১২ই অক্টোবর) বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে সিইসি সরাসরি বিএনপি’র নাম উল্লেখ করে বলেন, ‘বিভিন্ন ছোটখাটো দল নির্বাচনে অংশ নিলেও তারা বিএনপি’র সমকক্ষ নয়।’ বিএনপি অংশগ্রহণ না করলে নির্বাচন অসম্পূর্ণ থেকে যেতে পারে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
এদিকে, বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাওয়ার কথা জানিয়ে অতি সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডনাল্ড লু দেশের প্রধান তিন রাজনৈতিক দল- আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিকে চিঠি দিয়েছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ওই চিঠির মাধ্যমে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে শর্তহীন সংলাপে উৎসাহিত করার পাশাপাশি বিএনপি ছাড়া যেকোনোভাবেই ‘অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন’ সম্ভব নয় সেই বার্তাও সংশ্লিষ্ট মহলকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু বুধবার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনিশ্চিত জেনেও সিইসি তফসিল ঘোষণা করেছেন। তার কথামতে, বলতে হয়- একটি অসম্পূর্ণ নির্বাচনের পথকেই জেনেশুনে তিনি বেছে নিলেন।
সৌজন্যে : মানবজমিন
তারিক চয়ন
মন্তব্য করুন