ছবি : এনএনবিডি
ইদানিং বেশ কিছু নতুন রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত হতে তাদের মেনিফেষ্টো ও গঠনতন্ত্রসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়েছে। অন্য কোন দল নিয়ে তেমন কোন কথা বা মাথাব্যথা নেই কিন্তু বাংলাদেশ ডেভলপমেন্ট পার্টি নামে রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত হতে আবেদন করার সংঙ্গে সংঙ্গে হলুদ সাংবাদিকতা,বাম ও এক শ্রেণীর বুদ্ধিজীবিদের মাঝে হুলুস্থুল কাণ্ড শুরু হয়ে যায়। কারণ একটাই সব বলা যাবে ওটা বলা যাবে না।
বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির বেলায় বিভিন্ন মহলে এমন একটি পরিস্থিতির উদ্রেক করেছে যে যত রকম নেতিবাচক দিক আছে তার অন্বেষণ করতে হবে। দমাতে হবে তাদের অগ্রগতি। নিবন্ধন দেয়া নিয়ে খোদ নির্বাচন কমিশনও নানা কথা বলছেন, যা অন্য কোন নিবন্ধন প্রত্যাশীদের বেলায় বলেননি।
তবে তাদের এসব কথন যদি স্বচ্ছতার জন্য হয় তা জাতির কাছে জবাবদিহিতার বহিঃপ্রকাশ হতে পারে। কারণ বর্তমান বাংলাদেশের যতগুলো রাজনৈতিক দল আছে সবগুলো দলই কোন না কোন দল ভেঙ্গে, মূলদলকে বিলুপ্ত করে কিংবা পদত্যাগ করে বর্তমান দলে যুক্ত হয়েছে।
বাংলাদেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক দল ও রাজনীতিকদের ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা যায় বিভিন্ন রাজনীতিবিদ ও দলের নেতাকর্মীরা সময়ের প্রয়োজন উপলদ্ধি করে অনেক সিদ্ধান্ত নিয়ে রাজনীতিতে সক্রিয় থেকেছেন। করেছেন দল বদল কিংবা নতুন দল।এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটির পরিসংখ্যান পাঠকদের জন্য তুলে ধরার প্রয়াস রয়েছে আমার।
• ১৯২৯ সালে ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রদেশে মুসলিম লীগ থেকে বেরিয়ে শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক ‘কৃষক প্রজা পার্টি’ করেছেন।
• ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পরে মুসলিম লীগ থেকেই ভাষানীর নেতৃত্বে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ‘আওয়ামী মুসলিম লীগ হয়েছে।
• ১৯৫৫ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে ‘আওয়ামী লীগ’ হয়েছে।
• ১৯৫৭ সালে ভাষানীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ থেকে ‘ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি’ (ন্যাপ) হয়েছে।
• ১৯৭২ সালের ৩১ অক্টোবর স্বাধীন বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ থেকে ‘জাসদ’ হয়েছে।
• ১৯৭৫ সালের ২৪ শেষ জানুয়ারি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে বাকশাল হয়েছে।
• ১৯৭৬ সালে ৫ সেপ্টেম্বর বাকশাল থেকে বেরিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল ওসমানীর নেতৃত্বে ‘জাতীয় জনতা পার্টি’ গঠন হয়েছে।
• বাকশাল থেকে পুনরায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে রূপান্তর হয়েছে ১৯৭৮ সালে।
• বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর মুসলিম লীগ, ন্যাপ ও আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে জিয়াউর রহমান বিএনপি গঠন করেছেন ১৯৭৮ সালে।
• এরশাদের নেতৃত্বে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিয়েই জাতীয় পার্টি গঠন হয়েছে ১৯৮৬ সালে।
• ১৯৯২ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে ‘গণফোরাম' গঠন করা হয়েছে।
• সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী মুসলিম লীগ থেকেই এরশাদের জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টি থেকে বেরিয়ে নিজেই দল গঠন করেন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি। পরে নিজের দল বিলুপ্ত করে ১৯৯৬ সালে যোগ দেন বিএনপিতে।
• সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত প্রথমে ন্যাপ তারপর গণতান্ত্রিক পার্টি বিলুপ্ত করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন ১৯৯৬ সালে।
• ১৯৯৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে ‘কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ’ গঠন করা হয়েছে।
• ২০০৪ সালের ২১ মার্চ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল থেকে বেরিয়ে ‘বিকল্পধারা বাংলাদেশ’ গঠন করা হয়েছে।
• ২০১২ সালের ১ জুন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে ‘নাগরিক ঐক্য’ গঠন করা হয়েছে।
এরকম আরো ভুরি ভুরি উদাহরণ দেওয়া যাবে যারা দল পরিবর্তন করে অন্য দল গঠন করেছেন এবং নির্বাচন কমিশনে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারত এবং পাকিস্তানেরও কংগ্রেস এবং মুসলিম লীগ থেকে বেরিয়ে এসে অনেক দল উপদল গঠিত হয়েছে। ঐ সকল দল-উপদল অনেক সময় সরকার গঠন করেছে, দেশ শাসন করেছে।
তাদের গাত্রদাহ শুরু হওয়ার অন্যতম কারণ হলো, জবাবদিহিতা মূলক ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ, ইসলামী মূল্যবোধের ভিত্তিতেই গড়ে ওঠা সম্ভব। ইসলামপন্থীরা যদি প্রভাবশালী হয়ে যায় তাহলে তো তাদের চোখে ও মুখে লাগাম পড়ে যাবে।
এ জন্যেই হয়তো প্রখ্যাত নাট্যকার ও লেখক প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদ বলেছিলেন "আমি আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবীদের বুঝতে পারি না -- কারণ তারা অন্য ধর্মের প্রতি যত সহানুভূতিশীল নিজ ধর্মের প্রতি ঠিক ততটাই বিদ্বেষী। স্ব-ধর্মের বিদ্বেষী না হলেই যেন এ দেশে বুদ্ধিজীবী হওয়া যায় না”।
আরেকটি কথা মনে পড়ে যায় বিশিষ্ট সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদ আব্দুল কাদের মোল্লা প্রতিবেশী দেশের একবন্ধুকে দেখে বলেছিল আবে ইয়ার ১৩ হাত লম্বা ধুতি পড়েছ তাও তোমার ছতর খোলা। এ কথা শুনে প্রতিবেশী দেশের বন্ধু বলেছিলেন, তাই তো ভাবি দোস্ত-- আমাদের ১৩ হাত লম্বা ধুতি দিয়েও যেটা খোলা থাকে সেটা তোমরা মাত্র সাড়ে তিন হাত লুঙ্গি দিয়ে ঢাকো কেমনে? আব্দুল কাদের মোল্লা সাহেব ছিলেন অত্যন্ত বুদ্ধিমান এবং বিচক্ষণ ব্যক্তিত্ব সম্পূর্ণ রাজনীতিবিদ।
তিনি অবলীলায় জবাব দিয়েছিলেন আরে দোস্ত দেখোনা কুকুরের দেড় হাত লম্বা লেজে ইজ্জত ঢাকে না কিন্তু ছাগলের মাত্র সাড়ে তিন ইঞ্চি লেজই ইজ্জত ঢেকে রাখে। বাংলাদেশে অনেক বড় বড় দল আছে তারা দেশ ও জাতির উন্নয়ন করতে পারল না, দুর্নীতি ও শোষণমুক্ত ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে পারল না, কিন্তু সাড়ে তিন ইঞ্চি ছাগলের লেজ যদি ইজ্জত ঢেকে দেয় তাহলে তো সত্যি সত্যি তাদের মুখে লাগাম পরে যাবে। কারণ তাদের সৎ সাহস নেই, যাদের সৎ সাহস আছে তারা তো চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার জন্য যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বীকে মাঠে দেখে ভয় পায় না।
লেখক- ইবনে শাহ
ইবনে শাহ
মন্তব্য করুন