• , |
  • ঢাকা, বাংলাদেশ ।
সর্বশেষ নিউজ
* আদালতের সামনে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের বিক্ষোভ * আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না: মির্জা ফখরুল * ভয়াবহ পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছে সরকার অভিযোগ বিএনপির * ঢাকা ১৭ আসনের উপনির্বাচনের তারিখ ঘোষণা * নির্যাতন যত বাড়বে, আন্দোলন তত তীব্র হবে : নজরুল ইসলাম * ড. ইউনূসের কর ফাঁকি প্রমাণিত : ১২ কোটি টাকা পরিশোধের নির্দেশ * এখন আর ভয় দেখিয়ে লাভ নেই: ফখরুল * ২০২৩-২৪ বাজেট : দাম কমতে পারে যেসব পণ্যের * রাজধানীতে পুলিশের অভিযানে গ্রেফতার ৩৪ * মসজিদ ভাঙার প্রতিবাদে চীনে পুলিশের সঙ্গে মুসলিমদের ব্যাপক সংঘর্ষ

শিকোয় ঝুলবে কী গণতন্ত্র?

news-details

এনএনবিডি


আমরা স্বপ্নবাজ। দিবাস্বপ্ন অলীক নয় সত্যে পরিণত করার অদম্য সব উদ্ভাবনী শক্তিতে ভরপুর আমরা। নতুনত্বে ভরা আমাদের দিগন্ত। কল্যাণ- অকল্যাণের সুদূরপ্রসারী হিসাব করার অত সময় আমাদের নেই। উদ্ভাবনের উন্মাদনায় মত্ত সবাই। ভেজাল পণ্য ও পরিষেবা দিতেও অনেকে বেশ পারদর্শী।

এরপরও ভেজালের আলোচনায় নীতিকথা তো বাচালতা ছাড়া কিছুই নয় তা সবাই জানে, কিন্তু জনে তা মেনে নিয়ে চলতে পারে। তবে ভেজালদাতারও হাঁটুর জোরে প্রতিকূল পরিস্থিতি সামলেও নিতে পারে। না থাকলে চিপায় পড়ে গল গল করে সব স্বীকার করে। মূল কথায় আসি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন কড়া নাড়ছে। নীতি কথার ছলে ভেজালের জালে যে কে পড়বে তা নিয়ে ভাবতে হবে এখনি। আলামত পরিস্কার।

দেশের নাগরিক হিসেবে মানবাধিকার, তথ্য অধিকার, নিরাপত্তা সুরক্ষা মাথায় নিয়ে এগুতে হবে। দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা হস্তান্তর করার নির্বাচনী পদ্ধতি নানা কারণে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশন দেশের সকল পর্যায়ের নির্বাচন পরিচালনা করে আসছে। কমিশনের কর্মকাণ্ড প্রশ্নবিদ্ধ হলে কিংবা জবাবদিহিতা না থাকলে কোনো সমস্যা বা সংকট মোকাবেলা করা সম্ভব নয়।

এমনি অবস্থার মধ্যে বাংলাদেশে ব্যাপক আলোচিত বিষয়গুলোর মধ্যে মানবাধিকার, গণতন্ত্র, নির্বাচন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকাণ্ড বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে।

সম্প্রতি মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রধান উপ মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল ওয়াশিংটনে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের জবাবদিহি করতে হবে এমন হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন তারা বাংলাদেশে কেবল অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের নীতিকে সমর্থন করেন।

এছাড়া বাংলাদেশে মার্কিন দূতাবাসও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে ডয়চে ভেলের ডকুমেন্টারির বিষয়ে সরকার যাতে পদক্ষেপ নেয় তাও বলেছে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে যে সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে তাও টিআইবিসহ বিভিন্ন সাংবাদিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলে আসছে। এবং আইনটি বাতিলের দাবি জানাচ্ছে। এই আইনে দীর্ঘ ছয়মাস থেকে আটক আছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কোবরা। তার মুক্তির দাবিতে ১২ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষীর্থীরা।

সারাদেশে বিভিন্ন রকম অসংগতি তুলে ধরে প্রতিবেদন প্রকাশের জেরে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। সর্বশেষ যমুনা টেলিভিশনের রংপুর প্রতিনিধি সরকার মাজহার মান্নানের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়। এর আগে চট্টগ্রাম খুলনাতেও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়।

এর আগে প্রথম আলোর সাভার প্রতিনিধি সামসুজ্জামানকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার করা হয়। একই আইনে মামলায় পত্রিকাটির সম্পাদককেও জড়ানো হয়। সংসদের বিশেষ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম আলোকে নিয়ে বিষোদগার করেছেন। আখ্যা দিয়েছেন  আওয়ামী লীগ, ও দেশের শত্রু হিসেবে। এসবের মূলেই সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে সংকুচিত করা। কাজের পরিধিকে নিয়ন্ত্রণ করার ইঙ্গিতও হয়তো বহন করে।

কিন্তু বাংলাদেশের সংবিধানে তথ্য অধিকার আইনে যা বলা হয়েছে তার সাথে এসব কর্মকাণ্ড কতটুকু সঙ্গতিপূর্ণ?  আমরা জানি যে তথ্যের অবাধ প্রবাহ এবং জনগণের তথ্য অধিকার নিশ্চিত করতেতথ্য অধিকার আইন -২০০৯পাস করা হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে চিন্তা, বিবেক বাক-স্বাধীনতা নাগরিকগণের অন্যতম মৌলিক অধিকার হিসাবে স্বীকৃত এবং তথ্য প্রাপ্তির অধিকার চিন্তা, বিবেক বাক-স্বাধীনতার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।

আইনটির দ্বিতীয় অংশে বলা হয়েছে জনগণ প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণের ক্ষমতায়নের জন্য তথ্য অধিকার নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক। তৃতীয় অংশে বলা হয়েছে জনগণের তথ্য অধিকার নিশ্চিত করা হইলে সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সংবিধিবদ্ধ সংস্থা এবং সরকারি বিদেশি অর্থায়নে সৃষ্ট বা পরিচালিত বেসরকারি সংস্থার স্বচ্ছতা জবাবদিহিতা বৃদ্ধি পাবে, দুর্নীতি হ্রাস পাবে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সংবিধিবদ্ধ সংস্থা এবং সরকারি বিদেশি অর্থায়নে সৃষ্ট বা পরিচালিত বেসরকারি সংস্থার স্বচ্ছতা জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে বিধান করা সমীচীন প্রয়োজনীয়।

আইনটির দ্বিতীয় অধ্যায়ে বলা হয়েছে,এই আইনের বিধানাবলী সাপেক্ষে, কর্তৃপক্ষের নিকট হইতে প্রত্যেক নাগরিকের তথ্য লাভের অধিকার থাকবে এবং কোন নাগরিকের অনুরোধের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাহাকে তথ্য সরবরাহ করিতে বাধ্য থাকিবে৷

তথ্য অধিকার আইনের আলোকে সকল নাগরিক যেকোনো অবস্থাতেই তথ্য পাওয়ার কথা। কিন্তু তা হতে হবে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের স্বার্থে। ভৌগলিক অখন্ডতাকে অক্ষুন্ন রাখতে হবে। এর আগে প্রথম আলোর সাংবাদিক ফারজানা ইসলাম সচিবালয়ে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে শারিরীকভাবে নির্যাতনের শিকার হন। মামলা দিয়ে কারান্তরীণ করা হয়। এ যেন শিকল পড়া গণতন্ত্রে শিকলবন্দি গণমাধ্যমের ভয়াল রূপ দেখছে জাতি। জনগণের তথ্যের অধিকার প্রাপ্তিকে বৃদ্ধাঙ্গলি প্রদর্শন।

আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সাংবাদিকদের তথ্য সংগ্রহ সংবাদ পরিবেশনের ওপর বিধি নিষেধ আরোপ করেছে নির্বাচন কমিশন। যা হাত-পা বেধে সাঁতার কাটতে নামিয়ে দেয়ার নামান্তর। এতে ভোটের স্বচ্ছতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে এবং জনগণ তথ্য প্রাপ্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে। ইসির আরোপিত শর্তগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ভোটের দিন সাংবাদিক গণমাধ্যমকর্মীরা মোটরসাইকেল ব্যবহার করতে পারবেন না। ভোটকেন্দ্রের ভেতর থেকে কিংবা ভোট গণনার সময় সরাসরি সম্প্রচার করতে পারবেন না। ফেসবুক লাইভও করা যাবে না। ভোটকেন্দ্রে একইসঙ্গে দুটির বেশি সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিক প্রবেশ করতে পারবে না। ১০ মিনিটের বেশি ভোটকেন্দ্রে অবস্থানও করতে পারবেন না। কেন্দ্রের ভেতরে নির্বাচনী কর্মকর্তা,এজেন্ট ভোটারের সাক্ষাৎকার নেওয়া যাবে না। এমন সব শর্ত দেয়া হয়েছে যা গণমাধ্যমের স্বাধীন কর্মকাণ্ডকে সংকুচিত বা নিয়ন্ত্রিত করার মতো অবস্থা। এসব আয়োজনের মধ্যে বাংলাদেশে ইমবেডেড জার্নালিজম ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত দেয়।

দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে গণমাধ্যমকর্মীদের কাজ করাকে কঠিন করে তুলবে ইসির শর্তগুলো। কারণ সংসদীয় আসনের বেশিরভাগই প্রত্যন্ত অঞ্চল নিয়ে গঠিত। সেখানে যদি সাংবাদিকরা অবাধ চলাফেরা করে কাজ করতে না পারেন তাহলে সব কেন্দ্রে পৌঁছতে পারবে না সাংবাদিকরা, ভোটের স্বচ্ছতার বিষয়টি প্রশ্ববিদ্ধ হয়ে উঠবে। পরিবহন বা মোটরসাইকেল ব্যবহার করতে না পারলে তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করা সম্ভব হবে না। নির্বাচন কমিশনের এসব শর্তের সবকটি স্বাধীন গণমাধ্যমের পরিপন্থি এবং নাগরিকদের তথ্য অধিকারকে খর্ব করবে।

আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির এই সময়ে বেশিরভাগ মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে। এর মাধ্যমে সকল খবরাখবর পাওয়ার চেষ্টা করে। সেখানেও বিধিনিষেধ আরোপ করে ইসি। আবার একটি ভোটকেন্দ্রে দুজনের বেশি সাংবাদিককে ঢুকতে দেয়া হবে না বলে জানিয়েছে ইসি। তাহলে দুজন গণমাধ্যম কর্মী ছাড়া বাকি সাংবাদিকরা নিউজ কাভার করবেন কিভাবে? জনগণ যদি আস্থা না পান যে নির্বাচন স্বচ্ছ হবে, তাহলে তো তারা ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন। ফলে আবারও একতরফা নির্বাচন হওয়ার দিকেই যাবে। ইসি কী এররকম কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিকে অগ্রসর হচ্ছেননা নির্বাচনী ব্যবস্থাকে গহীন অন্ধকারে নিয়ে যেতে চান। একদিকে রাজনৈতিক অনৈক্য থাকায় সকল দলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিয়ে যেমন শঙ্কা তৈরি হয়েছে, তেমনি নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়েও তৈরি হয়েছে ধূম্রজাল। এমনি অবস্থা চলতে থাকলে দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যাবে, উঠবে শিকোয়।

সাংবাদিকদের অবাধ তথ্য সংগ্রহকে বাধাগ্রস্ত করলে নির্বাচনে স্বচ্ছতা থাকবে না। কারণ গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ সংসদীয় আসনের উপনির্বাচন যেমন অনিয়মের অভিযোগে বাতিল করতে হয়েছিল ইসিকে। যদিও এটি একটি আসনের ঘটনা। যখন ৩০০টি আসনে একযোগে নির্বাচন হবে তখন কি ইসি সেই পদক্ষেপ নেয়ার সক্ষতা রাখে? হয়তো তা এখনো হয়ে উঠেনি।

নির্বাচনকে বিশ্বাসযোগ্য গ্রহণযোগ্য এবং স্বচ্ছ করার জন্য সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন আয়োজন করা যেমন জরুরি তেমনি গণমাধ্যমের অবাধ তথ্য সংগ্রহ করে তা জাতিকে জানিয়ে দেয়ার সকল প্রতিবন্ধকতা রোধ করতে ইসিকে নিতে হবে কার্যকর উদ্যোগ। অতীতে নির্বাচন কমিশনগুলোর বিতর্কগুলো আবারও ফিরে আসুক তা জাতি প্রত্যাশা করে না।

 

 


আবু জায়েদ আনসারী

মন্তব্য করুন