• , |
  • ঢাকা, বাংলাদেশ ।
সর্বশেষ নিউজ
* জাকসু নির্বাচনের চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ, মোট ভোটার ১১ হাজার ৯১৯ * ঢাকায় বৃষ্টি নিয়ে যে বার্তা আবহাওয়া অধিদফতরের * নিউইয়র্কে রেস্তোরাঁয় বন্দুক হামলা, নিহত ৩ * দেখামাত্র গুলির নির্দেশ : বার্তা ফাঁসকারী পুলিশ সদস্য গ্রেপ্তার * চট্টগ্রামে দাঁড়িয়ে থাকা পিকআপে কাভার্ড ভ্যানের ধাক্কা, নিহত ৫ * মহাখালীতে সিএনজি ফিলিং স্টেশনে আগুন * আবাসন ভাতা নিশ্চিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ * ৮৩টি আসনের সীমানা পরিবর্তনে আবেদন পড়েছে ১৭৬০টি * ঠিকাদারির টাকা নিতে গিয়ে ঢাবিতে আটক ছাত্রলীগ নেতা * রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তি করতে পারবে না প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

রাষ্ট্রদেহের প্রধান তিনটি অঙ্গ যখন এক হয়ে যায়

news-details

ছবি-সংগৃহীত


আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার প্রধান তিনটি অঙ্গ, নির্বাহী বিচার  ও শৃংখলা বিভাগ। এই তিনটি প্রধান অঙ্গ যখন রাষ্ট্রীয় সংবিধানের আওতায় স্বাধীনভাবে নিজ নিজ কর্ম সম্পাদন করে তখন রাষ্ট্র নামক দেহটি যেমন সবল হিস্টপুষ্ট হয়, তেমনি হয় নিরোগ। আর এমন রাষ্ট্র নামক দেহটি সকল ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঝড়-ঝঞ্ঝা বন্যা সাইক্লোন সবকিছুর মোকাবেলা করেই মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকে।

গণতন্ত্রের রুপ ও কাঠামোগত  মতপার্থক্য থাকলেও গত এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে উদার রাষ্ট্রের যেসব মৌলিক বৈশিষ্ট্যের বিষয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা একমত তার মধ্যে আছে—১. ব্যক্তির সার্বভৌমত্ব; ২. ব্যক্তি হিসেবে নাগরিকের স্বাধীনতা; ৩. জনগণের মৌলিক অধিকারের সুরক্ষা; এবং ৪. রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গ নির্বাহী  বিচার ও  শৃংখলা বিভাগের স্বাধীন উপস্থিতি এবং ক্ষমতার মধ্যে বিভাজন, যাকে বলা হয় ‘সেপারেশন অব পাওয়ার’। যেকোনো আধুনিক রাষ্ট্রের বর্ননা করতে  রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রাথমিক পাঠে এই বিষয়গুলো ভালোভাবে শেখানো হয়। কারণ হচ্ছে এগুলো ছাড়া গণতান্ত্রিক ও স্থিতিশীল রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে উঠতে পারে না।

সেপারেশন অফ পাওয়ার নিয়ে অনেক বিতর্ক হলেও এর মর্মার্থ বিষয়ে সকলেই একমত। পৃথিবীতে যত দেশ আজকে উন্নতির কাতারে সামিল হয়েছে সে সব  দেশের উল্লেখিত তিনটি প্রধান অঙ্গ স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ক্ষেত্রে যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতার আলোকেই কর্ম সম্পাদন করে চলেছে। এর ব্যতিক্রম যে একদম হয় না তা কিন্তু একবারে নয়। যেখানে যতটুকু ব্যতিক্রম হয় সেখানেই রাষ্ট্র নামক দেহটি ততটুকু দুর্বল হয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে আমাদের এই মাতৃভূমি রাষ্ট্রদেহটির উল্লেখিত তিনটি অঙ্গ স্বাধীনভাবে নিজ নিজ কর্ম সম্পাদন করা তো দূরের কথা, প্রধান তিনটি অঙ্গ একত্রে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। আপাত দৃষ্টিতে এটা খুব ভালো শোনায়, আমরা বীরের জাতি একতা ও সংহতি খুবই ভালোবাসি। রাষ্ট্রদেহের প্রধান তিনটি অঙ্গ নিজ নিজ নিয়মে আলাদা আলাদা কক্ষ থেকে নিয়ন্ত্রিত হলে একতা ও সংহতি থাকে না, তাইতো সেপারেশন অফ পাওয়ার আমরা মানতে পারিনা, আমরা পাওয়ারকে সেন্ট্রালাইজ করতে ভালোবাসি বলেই আমাদের রাষ্ট্রদেহের সকল অঙ্গ প্রত্যঙ্গ একজনের নির্দেশে পরিচালিত হয়। এভাবে আমারা  উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হ‌ওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করি, নিদানপক্ষে এদেশকে সিঙ্গাপুরের কাতারে দেখার ঘোষণা অনেক আগেই দিয়েছি। ইদানিং দুষ্টু লোকেরা  বলতেছে আমাদের উন্নত রাষ্ট্রপ্লেন সিঙ্গাপুরের রাস্তা ভুলে শ্রীলংকার বান্দরনায়েক এয়ারপোর্টে ল্যান্ড করার জন্য কলম্বোর আকাশের চক্কর দিচ্ছে।

উন্নয়নের স্বয়ং সম্পূর্ণতা থেকে একবারে দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে। এর কারণ খুঁজতে হলে আমাদেরকে ১৬ বছর পিছনে ফিরে যেতে হবে। ২০০৭ সাল থেকেই এর সূত্রপাত যা ২০০৯ সালে এসে স্থায়ী রূপ লাভ করতে থাকে। রাষ্ট্র দেহের প্রধান তিনটি অঙ্গের আছে পরিচালক এবং পরিকল্পনাকারী। আমাদের বুদ্ধিমান মেধাবী ও চৌকস  ছাত্রটি সাফল্যের সাথে শিক্ষা জীবন সমাপ্ত করে, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের বিভিন্ন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েই সহকারী হিসেবেই রাষ্ট্রদেহের প্রধান তিনটি অঙ্গ পরিচালনা শুরু করে, ক্রমান্বয়ে পেশাগত ট্রেনিং, মেধা ও অভিজ্ঞতার পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষেই পরিচালকের দায়িত্বে আসীন হয়। অথচ রাষ্ট্রদেহ উন্নয়নের পরিকল্পনা করে তৃতীয় বেঞ্চে বসা টেনেটুনে পাশ করা রাজনীতিবিদরা। রাজনীতিবিদরা কখনোই স্থায়ীভাবে রাষ্ট্রদেহে প্রবেশ করতে পারে না। তারা আসে কিছু সময়ের জন্য আর পরিচালকরা যুগের পর যুগ তিন যুগ ধরে রাষ্ট্রদেহের  অঙ্গ পরিচালনা করে। এত কষ্ট করে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের  পরীক্ষায় উত্তীর্ণ মেধাবী ও চৌকস পরিচালকবৃন্দ চাটুকার আরাম প্রিয় রাজনীতিবিদের ধোকায় পড়ে কিভাবে নীতি-নৈতিকতা, চাকুরীর বিধিমালা,দেশ ও জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা সিঁকায় তুলে ফেলে এর হিসেব আমরা কেউ মিলাতে পারছি না।

আইনের রচনাকারী ও প্রয়োগকারী নিজেরাই আইন অমান্য করতে সদা প্রস্তুত। বিচার বিভাগ শক্ত হাতে  শৃঙ্খলা ও নির্বাহী বিভাগের লাগাম টেনে ধরতে পারে না। বিচার ও শৃঙ্খলা বিভাগের প্রধান দায়িত্ব হয়ে যায় নির্বাহী বিভাগকে রক্ষা করা। শুধু রক্ষা করা বললেই ভুল হবে নির্বাহী বিভাগ পরিচালনাকারী রাজনৈতিকদের সর্বত্র দলীয় করনকে স্থায়ী রূপ দেওয়ার জন্য একপাঁয়ে দাঁড়িয়ে গেল। দেশ ও জনগণের অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে সে বিষয়ে কোন চিন্তা চেতনতা থাকল না। যদি বলেন  এসব কথার প্রমাণ কি--- আমি বলব বুকে হাত দিয়ে আপনার বিবেককে জিজ্ঞেস করুন, জবাব পেয়ে যাবেন।

বাসা বাড়ি থেকে  বিরোধী রাজনৈতিক দলের ঘুমন্ত  নেতাকর্মীদেরকে ধরে নিয়ে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মামলা সাজালো, অমুক রাস্তার মোড়ে ২০/৩০ জন কিংবা শতাধিক ব্যক্তি মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে রাষ্ট্রবিরোধী কিংবা  রাষ্ট্রীয় সম্পদে হামলা করার জন্য একত্রিত হয়েছিল, ধৃত ব্যক্তির ডানহাতে একটি ও বাম হাতে তিনটি বোমা ছিল। এমন ভাবে মামলা সাজানো হলো  এক বছর আগে জামিন হবে না। আর এমন এমন ব্যক্তির নামে মামলা সাজালো তাদের ৪০-৫০ বছরের ব্যক্তিগত জীবনে যাদের নামে কোন ধরনের ক্রাইম রিপোর্ট নেই, এমন কি তাঁদের নামে থানায় সাধারণ ডায়েরি পর্যন্ত কেউ করেনি। জিজ্ঞেস করলে বলে উপরওয়ালার নির্দেশ।  রাজনৈতিক দলের নিরীহ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে নিয়ে রাতের অন্ধকারে ক্রসফায়ারের নাটক সাজিয়ে গুলি করে হত্যা করে, আবার রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের নামেই সেই বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের মামলা দিয়ে গ্রেফতার করার সময়  বলা হয় উপরওয়ালার নির্দেশ।  তাদের বিবেক বুদ্ধি, শিক্ষা-দিক্ষা, অভিজ্ঞতা, চাকরির বিধিমালা, রাষ্ট্রীয় আইন, নীতি-নৈতিকতা কোন কিছুই প্রয়োজন নেই ,আছে শুধু উপরওয়ালা, ।

বিচারক দিনের পর দিন এইসব মামলা দেখছেন আর জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছেন। দেশের গোয়েন্দা বিভাগ সঠিক তদন্ত করছে না, উল্টো রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করে বাহবা বা প্রমোসনের আশা করছে।   বিচার বিভাগের কর্তা ব্যক্তিরা  তাঁদের জীবনের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা থেকে ভালো ভাবেই বুঝতে পারেন এসব সাজানো মিথ্যে মামলা।‌ রাষ্ট্রের জনগণের সেবার উদ্দেশ্যে  যে পদে আসীন হয়েছেন তার মূল্য এবং মর্যাদা অনেক বেশি। যেখানে বসার উদ্দেশ্যই হলো দেশের সাধারণ নাগরিকের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা। দুষ্টের দমন শিষ্টের পালন করা । কিন্তু  আর কত দিন  ওই আসনে বসে শুধু একটা গোষ্ঠীকে রক্ষা করতে বিবেকের বিরুদ্ধে রায় দিবেন। দেশের মানুষের  সেবার জন্য নিয়োগ প্রাপ্ত হয়ে,  সাধারণ মানুষের সাথে এমন আচরন, এসব কি আপনার পদমর্যাদা কিংবা ব্যক্তিত্বের পক্ষে সোভা পায়। নিজের পেশাগত বিধি-মালা,শপথ, অর্জিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার বিপরীতে আর কতকাল চলবেন।

আমরা তো মানুষ, আমাদের তো বিবেক থাকার কথা। আমরা কেউ হাজার বছরের আয়ু নিয়ে পৃথিবীতে আসেনি। কিংবা এমন কোন স্বর্গীয় নিশ্চয়তা পায়নি যে জমানো সম্পদ সুস্থ শরীরে ভোগ করতে পারবেন কিংবা  আপনার পরবর্তী প্রজন্মের পর প্রজন্ম খুবই সুখে স্বাচ্ছন্দে রাজার হালে দিন কাটাতে পারবে। তাহলে এত বেশি অন্যায় অনিয়মের বিরুদ্ধে বিবেক জাগ্রত হয় না কেন? ছাত্র জীবনে ও চাকরি প্রাপ্তির সময়  যে মৌলিক মানবীয় গুণাবলী ছিল তার সবটুকু কি প্রজাতন্ত্রের চাকরি করতে এসে হারিয়ে ফেললেন?  প্রশ্ন করলে এর সাদামাটা জবাব দিবে আমি একাই কি করব, বাধ্য করা হচ্ছে। রাষ্ট্রের এক একটি গুরুত্বপূর্ণ  বিভাগকে বাধ্য করে ফেলল, আর এত বুদ্ধিমান মেধাবী ও চৌকস  পরিচালকগন রাষ্ট্রদেহের নিয়ন্ত্রণকারী সংবিধান ও বিধিমালা ভুলে গিয়ে সবকিছুতে  তথাস্তু তথাস্তু জি স্যার স্যার স্যার বলে বলে মুখে ফেনা তুলে ফেললো, এটাও কি বিশ্বাস করা যায়।

দেশের জনগণের মৌলিক অধিকার নিশ্চিতকরণ, আভ্যন্তরিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য নিয়োগ প্রাপ্ত প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা কর্মচারীগন রাষ্ট্রের কল্যাণ কামনার্থে জনগণের পাশে দাঁড়াবে। এটাই নিয়ম। কিন্তু আমাদের দেশে "বেড়ায় ক্ষেত খেয়ে ফেলে"। রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ পদে অধিষ্ঠিত হয়ে রাষ্ট্রীয় ইউনিফরম পরে রাজনৈতিক দলের মুখপাত্রের মতো বক্তব্য দেন। রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তি করতে গিয়ে অতি উৎসাহী হয়ে বিরোধী মতাদর্শের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের মৌলিক অধিকার হরণসহ গণসমাবেশে গুলি চালিয়ে জনগণের রক্তের বন্যা বইয়ে দেওয়ার কাহিনী সদর্পে প্রচার করে। প্রজাতন্ত্রের শান্তি-শৃঙ্খলাকার্যে নিয়োজিত ভূতপূর্ব বাহিনী প্রধানের এমন ঘোষণা শুনে কেবলই মনে হতে থাকে, এ লজ্জা রাখি কোথায়, ধরণী দ্বিধা হও!

আমাদের  রাষ্ট্রদেহের প্রধান প্রধান অঙ্গ গুলো বিরোধী  মতাদর্শের রাজনৈতিক কর্মীদেরকে দমন করার বিনিময়ে বেশ কিছু উপহার উপঢৌকন লাভ করে। নৈতিক অবক্ষয়, ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট, অর্থ পাচার, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতি দমন করা যাদের কাজ ছিল তারাই বিরোধী দল দমন নিয়ে ব্যস্ত, আর অন্য দিকে চলে  "ঘেঁটে ঘুঁটে দে মা চেটে পুটে খাই"। এমন পরিস্থিতিতে যে যেদিকে পারছে লুটপাট করে দেশকে দুর্ভিক্ষের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এ যেন" ঘর পোড়া আগুনে আলু পোড়া খাওয়া' কিংবা "প্রজাতন্ত্রের নাক কেটে বিরোধী দলের যাত্রা ভঙ্গ করার অবস্থা"  রাজনীতিবিদদের ভাষায় তথাকথিত বসতবাড়ির পোকামাকড় মারার জন্য আগুন দিয়ে  ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিলেন। পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করবেন কোথায়। কতজন আর দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে পারবেন, রাঘব বোয়ালরা বিদেশে চলে গেলে সাধারণদের অবস্থা কি হবে। কর্তা মহাশয়ের নির্দেশে সাধারণ কর্মচারীরা কর্ম সম্পাদন করে। কর্তা মহাশয় ভেগে গেলেও  সাধারণ কর্মচারীদের যাওয়ার সামর্থ্য কিংবা উপায় থাকবে না। সাধারণ কর্মচারীদেরকে দেশের জনগণের সাথে মিলেমিশে প্রজন্মের পর প্রজন্ম এ দেশেই বসবাস করতে হবে। অদৃষ্টের কি নির্মম পরিহাস সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আজ না বুঝে নিয়ম নীতি ভঙ্গ করে উপরওয়ালার আনুগত্য করতে গিয়ে নিজের বসতভিটায় নিজ হস্তে অগ্নি সংযোগ করছে। দেশ বিপন্ন হলে, দুর্ভিক্ষের কবলিত হলে, দেউলিয়া রাষ্ট্র ঘোষিত হলে, স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়লে আপনারা কি নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দে থাকতে পারবেন?

রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান পরস্পর থেকে আলাদা থাকবে এবং তাদের নির্ধারিত ভূমিকা স্বাধীনভাবে পালন করবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে একটি আরেকটির ওপরে কার্যত নজরদারি করবে। নির্বাহী বিভাগ যেন ইচ্ছেমতো চলতে না পারে তা একাদিক্রমে আইনপ্রণেতারা (অর্থাৎ আইনসভা) এবং বিচার বিভাগ দেখবে। আইনপ্রণেতারা যেন এমন আইন তৈরি করতে না পারেন, যা নাগরিকের অধিকারকে সীমিত করে, তা দেখার দায়িত্ব বিচার বিভাগের। একেই ‘চেক অ্যান্ড ব্যালান্স’ বলে অভিহিত করা হয়। স্বাধীনভাবে এগুলো চলার অর্থ হচ্ছে কেউ কারও মুখাপেক্ষী হবে না, কেউ কারও সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে পদক্ষেপ নেবে না।

অতীতে আমরা বহুবার এমন দেখছি, স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের ৯০ দশকের শেষ দিকে রাষ্ট্রদেহের প্রধান তিনটি অঙ্গ সংবিধান ও চাকরির বিধিমালা অনুযায়ী ভুল রাস্তা থেকে সরে আসে। ১৯৯৬ সালে নির্বাহী  বিভাগের চাপে ১৬ ফেব্রুয়ারি একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও রাষ্ট্রের প্রধান তিনটি অঙ্গ সংবিধান ও চাকুরীর বিধিমালা অনুযায়ী ভুল পথ থেকে সঠিক পথে চলে আসে। এর ফলে দেশের স্থিতিশীলতা বজায় ছিল। মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ছিল, বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ, ব্যাংক বীমার অর্থনীতির চাকা সচল ছিল। দুর্নীতিবাজ অর্থ পাচারকারী ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটরা আজকের মত এমনভাবে "হরিলুটের"আসর বসতে পারেনি। বর্তমান সময়ে তো উপরওয়ালা উপরওয়ালা নাম জপ করতে করতেই ব্যাংক বীমা, অটোনোমাজ বডি, কর্পোরেশন, অধিদপ্তরের যেখানে যা ছিল সব কিছু চুষতে চুষতে ছোবড়া বানিয়ে ফেলেছে। এর জন্য শুধুই কি নির্বাহী বিভাগের উপরওয়ালা একমাত্র দায়ী। রাষ্ট্রের অন্য দুটি প্রধান অঙ্গের সক্রিয় সহযোগিতা ছাড়া উপরওয়ালা এ সবের কিছুই করতে পারতো না, এটা  সকলেই জানে।

আমার মাথা ব্যাথা মূলত এ কারণেই। রাজনৈতিক দলের লেজুর ভিত্তি করতে গিয়ে দেশে ও দেশের জনগণের কি পরিমান ক্ষতি,কত বড় অন্যায় অবিচার করা হলো, এর ফলতো আপনাদের পরবর্তী প্রজন্মকেও ভোগ করতে হবে, এ বিষয়ে একটুও চিন্তা  হলো না। এর বিনিময়ে দুনিয়া ও আখেরাতে কি পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে এ বিষয়ে একটু ভাবনাও এলো না। দেশের মানুষের জন্য না ভাবুন অন্তত নিজের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য ভাবুন। উপরওয়ালার অন্যায় আবদারের স্রোতে ভেসে ভেসে আপনি কোথায় গিয়ে নোঙ্গর করবেন। যে ঘাটেই নোঙ্গর করেন না কেন, সবখানেই সাধারণ মানুষ থাকবে, দেশের সাধারণ জনগণের মাঝেই আপনাকে বসবাস করতে হবে, জনগণ এবং রাজকর্মচারী একে অপরের পরিপূরক শক্তি, একজনকে ছাড়া অন্যজন চলতে পারে না, দেশ এবং জনগণ যদি না বাঁচে, আপনারা কার দায়িত্ব পালন করবেন। দেশের সংবিধান, আপনার পদমর্যাদা, দায়-দায়িত্ব, চাকুরীর বিধিমালা এবং শপথ ভঙ্গ করে সাধারণ মানুষের দৃষ্টি এড়িয়ে আপনি কোথাও যেতে পারবেন না।

আরেকটি বিষয় দৃষ্টি আকর্ষণ করে আমার এ লেখার সমাপ্তি ঘোষনা করতে চাই। ১৯৭১ সালের পাক হানাদার বাহিনী ও প্রশাসনের কথা আমাদের মনে আছে। অথচ ১৯৪৭ সালে বৃটিশের আধিপত্য থেকে স্বাধীনতা লাভের পর পূর্ব বাংলার এই ভূখণ্ডকে আগলে রেখেছিল পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী। ১৯৪৭ সালের পর পাকিস্তানের সেনাবাহিনী পুর্ব বাংলায় অবস্থান না নিলে এ পুর্ব বাংলাকে  স্বাধীন সার্বভৌম হায়দ্রাবাদ রাষ্ট্রের ভাগ্যবরণ করতে হতো।  পাকিস্তানের ওই নির্বাহী  বিভাগের পরিচালনায় ষাটের দশকে এই দেশে শিল্প উন্নয়নের সূচনা হয়েছিল। বিশ্বের বৃহত্তম আদমজী জুট মিলসহ ৭৭ টি পাটকল ৫৪ টি টেক্সটাইল মিল, ১৫ টি সুগার মিল ,কর্নফুলি ও পাকশী পেপার মিল, উপমহাদেশের দ্বিতীয় মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি, সমরাস্ত্র কারখানা, আশুগঞ্জ ও কাপ্তাই বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, স্টিল মিল, প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ, এ রকম আরও অনেক শিল্প কারখানা পাকিস্তানি প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আরো প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল মেডিকেল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, এগ্রিকালচার ইউনিভার্সিটি, প্রকৌশল ইউনিভার্সিটি, টিভি ষ্টেশন, বিমানবন্দর সহ আন্তর্জাতিক মানের সমুদ্র বন্দর। ব্রিটিশ ভারতে সেনাবাহিনীতে পূর্ব বাংলার জনগণের সর্বোচ্চ  রেঙ্ক ছিল মেজর, সিভিল প্রশাসনে পূর্ব বাংলার জনগণের একজনও আইসিএস অফিসার ছিল না।  পাকিস্তান আমলের ১০-১৫ বছরের মধ্যেই পূর্ব বাংলার জনগণ থেকে শত শত মেজর, কর্নেল, ব্রিগেডিয়ার, হাজার হাজার সিভিল সার্ভিস কর্মকর্তা সৃষ্টি হয়েছিল, আর এ সকল ক্ষেত্রে পশ্চিম পাকিস্তানীরা ছিল মাস্টার ট্রেইনার। রাস্তাঘাট উন্নয়ন সহ আজকের সচিবালয় সংসদ ভবন সবকিছুই পাকিস্তান আমলেই হয়েছে। তারপরও রাষ্ট্রদেহের অন্য দুটি বিভাগ যখন নির্বাহী বিভাগকে উপরওয়ালা মনে করে কার্য সম্পাদনা শুরু করে ঠিক তখনই বিভেদ ও বৈষম্য শুরু হয়ে যায়। এর ফলে সত্তরের দশক শেষ হ‌ওয়ার আগেই এত শিল্পকল কারখানা, অবকাঠামোগত উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, মাষ্টার ট্রেইনার হ‌ওয়ার পরও পাকিস্তান রাষ্ট্রদেহের প্রধান তিনটি অঙ্গের পরিচালকরা পুর্ব বাংলার মানুষের দুশমনে পরিণত হয়েছিল। কারণ পাকিস্তানি প্রশাসন পূর্ব বাংলার জনগণের টুটি চেপে ধরেছিল, বিচার বিভাগ এবং শৃঙ্খলা বিভাগ  মিলে নির্বাহী বিভাগের আনুগত্য করার কারণ এই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল। এর পরিণামে তারা হানাদার বাহিনী ও জবরদখলকারী প্রশাসনের খেতাব পেয়েছিলো  এবং এ দেশের জনগণের হাতে তাদের চরম পরাজয় হয়েছিল। বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সেনাবাহিনী ও প্রশাসন  পূর্ব বাংলার জনগণের ঘৃণার পাত্র হয়েছিল, জনগণ তাদের প্রতি থুতু নিক্ষেপ করেছিল, কান ধরে উঠবস করিয়েছিল।

আজকের অনেক মুরুব্বির এখনো বলে পাকিস্তান

আমলের রাষ্ট্রের প্রধান তিনটি অঙ্গের কর্মকর্তা কর্মচারীরা উচ্চ শিক্ষিত, মেধাবী, পেশাগত দক্ষতা ও উন্নত মৌলিক মানবীয় গুণাবলীর অধিকারী ছিল। তারপরও শুধুমাত্র রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং স্বৈরাচারের লেজুড়বৃত্তি করার কারণেই পুর্ব বাংলার জনগণের দুশমনে পরিণত হয়েছিল। যাদেরকে আজ আমরা ঘৃণা ভরে স্মরণ করি। একটাই প্রার্থনা আমাদের এই রাষ্ট্র দেহের প্রধান তিনটি অঙ্গের পরিচালক কর্মকতা কর্মচারীরা এদেশেরই সন্তান। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এদেশে সাধারন মানুষের সাথে মিলেমিশে থাকতে হবে। আজকে যারা প্রজাতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আছেন তাদেরকে পুনরায় প্রজাতন্ত্রের সংবিধান ও চাকরির বিধিমালার মধ্যেই ফিরে আসতে হবে, না হলে আপনারাও ১৯৭১ সালের পাক হানাদার বাহিনী ও জবর দখলকারী প্রশাসনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হবেন,ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আপনাদেরকে ক্ষমা করবে না ।

ইবনে শাহ-ঢাকা 



নিজস্ব প্রতিবেদক :

মন্তব্য করুন