• , |
  • ঢাকা, বাংলাদেশ ।
সর্বশেষ নিউজ
* রাজধানীর সূত্রাপুরে বিএনপির সমাবেশ চলছে * ভারতের সাথে বিরোধে কানাডার মিত্ররা কেন ট্রুডোর পাশে দাঁড়াচ্ছে না? * খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার আবেদনে যা রয়েছে * খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসা, সরকারের ‘কিছু করার নেই’ : আইনমন্ত্রী * ভিসানীতির কারণে পুলিশ ইমেজ সংকটে পড়বে না: আইজিপি * অস্ত্র ব্যবসার জন্য ইউক্রেন যুদ্ধ: পোপ ফ্রান্সিস * ঢাকার রাস্তায় সন্ত্রাসীদের এলোপাতাড়ি গুলিতে আহত ভুবন মারা গেলেন * দেশ ও জাতিকে বাঁচাতে হলে নৈশভোটের সরকারের পতনের বিকল্প নেই * পশ্চিম এশিয়ার প্রধান প্রতিরক্ষা শক্তি ইরান! * আমিনবাজারে বিএনপি'র মঞ্চ ভাঙচুর, সমাবেশ স্থগিত

রাজনীতি ও নাগরিক নিরাপত্তা

news-details

ছবি: এনএনবিডি


রাষ্ট্র নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। নিরাপত্তা না থাকলে রাষ্ট্রের কাঠামো থাকে না। রাষ্ট্র গঠনের যে মৌলিক উপাদান গুলো প্রয়োজন তার মধ্যে নির্দিষ্ট জনসমষ্টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তবে সেই জনসমষ্টি অবশ্যই নিরাপদ হতে হবে। বিপদগ্রস্থ জনসমষ্টি রাষ্ট্র গঠনের উপাদান হতে পারে না।

রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে যখন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত থাকে বা সংবিধান গণতন্ত্রকে অগ্রাধিকার দেয়, তখন সামগ্রিকভাবে গণতন্ত্র চর্চা করার সুযোগ সকলের থাকে। নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের প্রধানতম দায়িত্ব। দেশের আমলা কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সব কিছুর ঊর্ধ্বে থেকে সেই দায়িত্ব পালন করে। ক্ষমতার পালাবদল হবে, নতুন সরকার দায়িত্ব নিবে বা আগের সরকার বহাল থাকবে তাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু আসে যায় না। তাদের কাজ হলো সকল নাগরিকের অধিকার নিরাপত্তা যাতে বিঘ্নিত না হয় আইনানুযায়ী তা নিশ্চিত করা। সেটি হতে পারে সরকারি দলীয় লোক কিংবা বিরোধী দলীয় লোক। সবার আগে প্রত্যেকে এদেশের নাগরিক।

সংবিধানের ৩৭ অনুচ্ছেদের আলোকে দেশের প্রত্যেক নাগরিক সমাবেশের অধিকার রাখে।  জনশৃঙ্খলা বা জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধা-নিষেধ সাপেক্ষে শান্তিপূর্ণভাবে নিরস্ত্র অবস্থায় সমবেত হবার এবং জনসভা শোভাযাত্রায় যোগদান করার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকবে।

আবার সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদে দেশের প্রত্যেক নাগরিকের চিন্তা বিবেকের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে। একই সঙ্গে এই অনুচ্ছেদে আরও বলা হয়েছে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, বিদেশী রাষ্ট্র সমূহের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, জনশৃঙ্খলা, শালীনতা বা নৈতিকতার স্বার্থে এবং আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তি সঙ্গত বাধানিষেধ সাপেক্ষে প্রত্যেক নাগরিকের বাকস্বাধীনতা ভাব প্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে।

জাতিসংঘ কর্তৃক ব্যক্তি বা মানব নিরাপত্তা ঘোষণায় স্পষ্ট বলা হয়েছে, ‘People have the right to live, freedom and dignity. Free from poverty, and despair... with an equal opportunity to enjoy all their rights and fully develop their human potential’. জাতিসংঘের প্রস্তাবনার প্রতি রাষ্ট্রগুলো তাদের অকুণ্ঠ সমর্থন ব্যক্ত করেছে।

একটি রাষ্ট্রের  তিনটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো- আইন বিভাগ (Legislature), নির্বাহী বিভাগ (Executive) এবং বিচার বিভাগ (Judiciary) এই তিনটি বিভাগ রাষ্ট্র পরিচালনায় অত্যাবশ্যকীয়। মানুষের কল্যাণ, নিরাপত্তা এবং জীবনযাপন সুখময় করতে বিভাগগুলো কাজ করবে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এসবের কতটুকু পরিপালন করছেন বিভাগগুলো। এগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত রাজনৈতিক দলগুলো বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। তা নিয়ে বিস্তর প্রশ্ন উঠেছে। বিরোধীরা সমাবেশ করতে চাইলে নানা রকম অযুহাত তুলে তাদের দমন-পীড়ন করার অভিযোগ অহরহ। দৃশ্যত; অনেক ঘটনার সাক্ষীও এদেশের মানুষ। ভুক্তভোগী হচ্ছেন অতিসাধারণ মানুষ পথচারীরা।

দেশের রাজনীতির প্রধান লক্ষ্য হলো জনগণের কল্যাণ করা। তবে কতিপয় গোষ্ঠীর কল্যাণ নিশ্চিত করতে গিয়ে আরেকটি অংশের সাধারণ মৌলিক অধিকারকে ক্ষুন্ন করার কোনো সুযোগ সংবিধান দেয় না। কিন্তু বাংলাদেশের সামিগ্রিক রাজনৈতিক চিত্র এর পুরো উল্টো বলেই প্রতীয়মান হয়েছে। ক্ষমতাসীনদের রোষানলে প্রতিনিয়ত মানুষ অধিকার বঞ্চিত হচ্ছেন।

যেখানে সংবিধানের ২৭ নম্বর অনুচ্ছেদে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী। কিন্তু দেশের সকল মানুষ সেই সুযোগ আজ পাচ্ছে না। যা স্পষ্টতই সংবিধানের লঙ্ঘন।

সাম্প্রতিক সময়ে রাজনীতিতে উত্তাল পরিস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিরোধী দল বিএনপির সমাবেশকে ঘিরে সরকার মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়েছে। ১০ ডিসেম্বর সংঘাত অনেকটাই অবশ্যম্ভাবী হয়ে দেখা দিয়েছে। কারণ আওয়ামী লীগ সরকার নানা কৌশলে সমাবেশকে বাধাগ্রস্ত করছে বলে বিএনপি অভিযোগ করছে। অন্যদিকে বিএনপি যেকোনো মূল্যে সমাবেশ সফল করার ঘোষণা দিয়েছে। এদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও সরকারের নির্দেশে অনড় অবস্থানে থাকায় সংকট আরও ঘণীভূত হওয়ার আশঙ্কা দেয়া দিয়েছে।

এমনি পরিস্থিতিতে নাগরিকদের নিরাপত্তা হোক সে বিরোধী দলের কর্মী কিংবা সরকারি দলের তা অনিশ্চিত হতে পারে। চলতি বছর সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে বিরোধীদলের ছয় থেকে সাতজন কর্মী নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে বিএনপি। আসন্ন সমাবেশকে ঘিরে নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করাও হচ্ছে বলে গণমাধ্যমের খবরে উঠে আসছে।  আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সবশেষ কি ভূমিকা রাখবে তার ওপর নির্ভর করছে জনগণের নিরাপত্তা সংবিধানে ঘোষিত মানবাধিকার সুরক্ষার বিষয়টি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জনগণের নিরাপত্তা আইনের শাসন প্রতিষ্টায় কার্যকর দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখবেন বলে জনগণ প্রত্যাশা করে।


আবু জায়েদ আনসারী

মন্তব্য করুন