• , |
  • ঢাকা, বাংলাদেশ ।
সর্বশেষ নিউজ
* ডেঙ্গুতে আরও ১৯ জনের মৃত্যু * অধিকারের আদিলুর-নাসিরের হাইকোর্টে আপিল * রাজধানীর সূত্রাপুরে বিএনপির সমাবেশ চলছে * ভারতের সাথে বিরোধে কানাডার মিত্ররা কেন ট্রুডোর পাশে দাঁড়াচ্ছে না? * খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার আবেদনে যা রয়েছে * খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসা, সরকারের ‘কিছু করার নেই’ : আইনমন্ত্রী * ভিসানীতির কারণে পুলিশ ইমেজ সংকটে পড়বে না: আইজিপি * অস্ত্র ব্যবসার জন্য ইউক্রেন যুদ্ধ: পোপ ফ্রান্সিস * ঢাকার রাস্তায় সন্ত্রাসীদের এলোপাতাড়ি গুলিতে আহত ভুবন মারা গেলেন * দেশ ও জাতিকে বাঁচাতে হলে নৈশভোটের সরকারের পতনের বিকল্প নেই

রাজনীতির ডাউন প্লে

news-details

ছবি : এনএনবিডি


রাজনীতির মাঠে ক্রমে উত্তাপ ছড়াচ্ছে সরকার বিরোধীরা। সরকার কৌশলে তা প্রশমিত কিংবা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে। প্রশাসনযন্ত্রও সরকারের আদেশ পালন করছে। সংবিধান, আইন, নাগরিক অধিকার, মানবাধিকার, গণতন্ত্র কতটা নিরাপদ থাকছে সে ব্যাপারে কতটুকু ভাবা হচ্ছে সে প্রশ্নও উঠছে বারংবার। 

সংসদীয় গণতন্ত্রের বিকাশ বাংলাদেশে ভেঙে পড়ার উপক্রম। কারণ কার্যত বিরোধী দল ভূমিকা রাখছে না। দৃশ্যত বিদ্যমান প্রধান বিরোধী দল সরকারি ট্রিটমেন্টে চলে বা জনশ্রুত আছে গৃহপালিত বিরোধী দল। এমতাবস্থায় গণতন্ত্রের বিকাশ কতটুকু ধরে রাখা সম্ভব হতে পারে। বিরোধী দল যদি শুধুমাত্র নিজেদের অস্তিত্ব ধরে রাখার কৌশল অবলম্বন করে সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে কাজ করে তাহলে সেই সরকারের রূপ কতটুকু গণতান্ত্রিক থাকতে পারে তাও ভাববার বিষয়। ইতোমধ্যে সে অভিজ্ঞতা পেয়েছে দেশবাসী।

বাংলাদেশে বর্তমানে ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ আর ক্ষমতাসীনদের জন্য নিরাপদ বিরোধী দলে রয়েছে জাতীয় পার্টি। তবে বিরোধী দল বলতে সারা দেশে বিএনপিকে বিপজ্জনক বিরোধী দল হিসেবে বিবেচনা করে সরকার। বিপদাশঙ্কা থেকে সরকার বিএনপি ও তাদের মিত্র জামায়াতে ইসলামী সহ অন্যদের নানাভাবে ডাউন প্লে রাজনীতিতে রাখার চেষ্টা করছে সরকার। 

চলতি মাসের ১০ ডিসেম্বর রাজধানীতে বিএনপির গণসমাবেশকে ঘিরে সরকার তেমনি একটি রাজনৈতিক কৌশল নিয়েছিল। সমাবেশের অনুমতি দিতে ডিএমপি ও সরকারের নীতিগত  পদক্ষেপ সেই ইঙ্গিত দেয় বলে বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হয়। সমাবেশের আগে ৭ ডিসেম্বর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে এক বিএনপি কর্মী নিহত হয়। শীর্ষ কয়েকজন নেতাসহ গ্রেফতার করা হয় শত শত নেতাকর্মীকে। এরপরেই নিয়ন্ত্রণে নেতা হয় দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়। পুলিশি বাধায় কার্যালয়ে ঢুকতে না পেরে ফুটপাতে বসে পড়েন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেদিন রাতেই ফখরুল ও মির্জা আব্বাসকে গ্রেফতার করে চূড়ান্ত ভীতি প্রদর্শন করে সরকার। 

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে বিস্ফোরক উদ্ধারের দাবি করে। ফখরুল পুলিশের এই দাবিকে উড়িয়ে দিয়ে বলেন পুলিশই ব্যাগে করে বিস্ফোরক নিয়ে কার্যালয়ে ঢুকে বিএনপির ওপার দায় চাপাচ্ছে। তবে জনমনেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে যে কেন বিএনপি তার কার্যালয়ে বিস্ফোরক রেখে নিজেদের নিরাপত্তা ঝুঁকিতে ফেলবে? যে দলটি কয়েকবার সরকারও গঠন করেছে।

দলটির শীর্ষ নেতারা দাবি করেছিল যে সরকার অনাকাঙিক্ষত পরিবেশ তৈরি করে নেতাকর্মীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে সমাবেশ বানচালের চেষ্টা করছে। সরকার ও প্রশাসনের সমাবেশর আগের কয়েকটি পদক্ষেপ বিশ্লেষণ করলে সেরকমই চিত্র পাওয়া যায়। তবে এই ডাউন প্লে পলিটিক্স শুধু যে বিএনপির সঙ্গে করা হয়েছে তা নয়। দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও করা হচ্ছে। 

দেশের প্রধান ইসলামী দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গেও এধরণের কৌশল প্রয়োগ করা হয়েছে। বরং সেটি আরও তুঙ্গে। কিছুদিন আগে জামায়াতের বর্তমান আমীর ডা.শফিকুর রহমানের ছেলে ডা. রাফাতকে জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে গ্রেফতার করে পুলিশ। আদালতে তার মামলা বিচারাধীন। জামায়াতকে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার ভুয়া অভিযোগ তুলে সরকার অনেক দিন ধরে কোনঠাসা করে রাখার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করে আসছে দলটির শীর্ষ নেতারা। তবে জঙ্গি সংশ্লিষ্ট অনেকগুলো মামলা বিচারাধীন থাকলেও কোনো মামলায় জামায়াতের সংশ্লিষ্টতা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে বর্তমান সরকার। 

দেশের রাজনীতির মাঠে যখন সরকার বিরোধীরা সোচ্চার তখন জামায়াতকে নতুন কৌশলে দাবিয়ে রাখতে আ.লীগ জঙ্গি সম্পৃক্ততার ধোয়া তুলে এমন কৌশল নিয়েছে বলে দলটির পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে। সেই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে প্রথমে ডা. রাফাতকে গ্রেফতার করে। এরপর সোমবার দিবাগত রাতে জামায়াত আমিরকে আটক করে রাজধানীর যাত্রাবাড়ির জঙ্গি মামলায় গ্র্রেফতার দেখানো হয়েছে। আন্দোলন শুরুর আগে ডা. রাফাত ও জামায়াত আমিরকে জঙ্গি মামলায় গ্রেফতার দেখানো সরকারের পূর্ব পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র বলে দাবি করছে দলটি।

সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী জামায়াতের বৈশিষ্ট্য জনগণের কাছে এখনো অপরিচিত নয়। কারণ গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে তাদের সমস্ত কার্যক্রম মানুষ জানতে পারে। এমনকি দলটির আমিরকে গ্রেফতার পরবর্তী প্রতিবাদ কর্মসূচিও সহিংসতা বা প্রচলিত জঙ্গিদের বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে মিলে না। 

বিএনপি ও জামায়াতকে সরকার মোকাবিলা করার কৌশল হিসেবে সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গি সম্পৃক্ততার প্রচারণা চালাচ্ছে বলে বিরোধীদলগুলো অভিযোগ করছে। অন্যদিকে  বিরোধীদলগুলো দাবি করছে- সরকার ও প্রশাসন মানবাধিকার  লঙ্ঘন ও খুন গুম, গণতান্ত্রিক অধিকার, ভোটাধিকার, সমাবেশের অধিকার হরণ করছে প্রতিনিয়ত।

সরকারের শরীক বিরোধী দল জাতীয় পার্টিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার ভিন্ন কৌশল নিয়েছে। সম্প্রতি দলটির কো-চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদ ও চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের মধ্যে বিদ্যমান দ্বন্দ্ব নিরসনে নেপথ্যে কাজ কাজ করছে আওয়ামী লীগ। গত মঙ্গলবার(১৩ ডিসেম্বর) বিকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান, কো-চেয়ারম্যান ও সাদ এরশাদ। এসয় সংসদে ইতিবাচক ভূমিকা রাখায় জাতীয় পার্টিকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। 

এই বৈঠকের পর জানানো হয় জাতীয় পার্টি সংসদে ও সংসদের বাইরে ইতিবাচক গণতন্ত্রের বিকাশে ভূমিকা রাখবে। হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ মামলার ফাঁদে নিয়ন্ত্রিত রাজনীতি করেছেন। ঠিক তেমনি তার ছোট ভাই দলীয় নেতাদের একই রকম ফাঁদে নিয়ন্ত্রিত রাজনীতি করতে বাধ্য হচ্ছেন। নেপথ্যে আওয়ামী লীগ ভূমিকা রাখছেন বলে অনেকেই মনে করেন। 

দেশের আপামর জনতার কল্যাণে সরকার ও বিরোধীরা রাজনৈতিক সহনশীলতা, উদারতা দেখাবে তার ওপর নির্ভর করছে আগামী দিনের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ। রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত না হয়ে প্রতিযোগিতাপূর্ণ হওয়া উচিৎ। প্রতিযোগিতায় ধ্বংস নয়, হারলেও আছে তৃপ্তি। রাজনৈতিক দলগুলোর সেই তৃপ্ততা  দেখার অপেক্ষায় এদেশের কোটি জনতা।


আবু জায়েদ আনসারী

মন্তব্য করুন