লালবাগ কেল্লা ( ছবি: সংগ্রহীত)
ব্যস্ত নগরী ঢাকাতেই লুকিয়ে আছে অনেক ঐতিহাসিক স্থান। প্রাচীন ইতিহাস, সভ্যতা ও স্থাপত্যের টানে প্রায় সময়ই এসব স্থানে ভিড় লেগে থাকে দর্শনার্থীদের পদচারণায়। রাজধানী ঢাকার কেন্দ্রস্থলে মোঘল আমলে স্থাপিত প্রাচীন দুর্গ হলো লালবাগের কেল্লা। যা পুরান ঢাকার একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন।
আওরঙ্গজেবের পুত্র শাহজাদা আজম শাহ্ ১৬১৮ খৃষ্টাব্দে লালবাগ কেল্লা নির্মাণ করেছিলেন। মুঘল আমলে পূর্ব বাংলার রাজধানীর এই কেল্লায় ৫০০ সেনার সমাগম ছিল। মূলত, তখনকার সময়ে পর্তুগিজ, মগ ও শত্রু সৈন্যরা নদীপথে এসে ঢাকায় আক্রমণ করে সম্পদ লুণ্ঠন করে নিয়ে যেত। নগরবাসীকে সুরক্ষা দিতে সম্রাট লালবাগ কেল্লা নির্মাণ করার নির্দেশ দেন।
লাল ইট, মার্বেল পাথর এবং কষ্টি পাথর দিয়ে নির্মিত এই কেল্লা যেমন দামি, তেমনি সমৃদ্ধ বাংলার ঐতিহ্য বহন করে। লালবাগ কেল্লার প্রধান ফটকের সামনেই ছিল বুড়িগঙ্গা। নদীর কোল ঘেঁষে ছিল কেল্লার প্রাচীর। তবে বুড়িগঙ্গা এখন অনেকটা দূরে চলে গেছে। শায়েস্তা খানের আমলে বাংলায় মুঘল শাসনের শ্রেষ্ঠ সময় অতিবাহিত হয়।
বাংলার প্রাদেশিক গভর্নর বা সুবেদার নির্বাচিত হওয়ার আগে শায়েস্তা খান ছিলেন তখনকার প্রধান সেনাপতি ও শাহজাদা আজমের আত্মীয়। পরিবিবি ছিলেন শায়েস্তা খানের কন্যা। এই পরী বিবির সাথে শাহজাদা আজম শাহের বিয়ে ঠিক হয়েছিল। তবে শায়েস্তা খানের কন্যা পরী বিবির মৃত্যুর পর এ দুর্গ অপয়া মনে করা হয়।
পরী বিবিকে দরবার হল এবং মসজিদের ঠিক মাঝখানে সমাহিত করা হয়। শায়েস্তা খাঁ দরবার হলে বসে রাজকাজ পরিচালনা করতেন। ১৬৮৮ সালে শায়েস্তা খাঁ অবসর নিয়ে আগ্রা চলে যাবার সময় দুর্গের মালিকানা উত্তরাধিকারীদের দান করে যান। শায়েস্তা খাঁ ঢাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার পর নানা কারণে লালবাগ দুর্গের গুরুত্ব কমতে থাকে। ১৮৪৪ সালে ঢাকা কমিটি নামে একটি আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠান দুর্গের উন্নয়ন কাজ শুরু করে।
প্রথমে এর নাম ছিল কেল্লা আওরঙ্গবাদ। পরে লালবাগ দুর্গ নামে পরিচিতি লাভ করে। ১৯১০ সালে লালবাগ দুর্গের প্রাচীর সংরক্ষিত স্থাপত্য হিসেবে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধীনে আনা হয়। অবশেষে নির্মাণের ৩০০ বছর পর গত শতকের আশির দশকে লালবাগ দুর্গের যথাসম্ভব সংস্কার করে এর আগের রূপ ফিরিয়ে আনা হয় এবং দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।
স্থাপনা : লালবাগের কেল্লায় স্থাপনার মধ্যে পরী বিবির সমাধি উল্লেখযোগ্য। এটি মোগল আমল এর একটি চমৎকার নিদর্শন। প্রশস্ত এলাকা নিয়ে লালবাগ কেল্লা অবস্থিত। কেল্লার চত্বরে তিনটি স্থাপনা রয়েছে-
কেন্দ্রস্থলের দরবার হল ও হাম্মাম খানা, পরী বিবির সমাধি, উত্তর পশ্চিমাংশের শাহী মসজিদ। এছাড়া দক্ষিণ-পূর্বাংশে সুদৃশ্য ফটক এবং দক্ষিণ দেয়ালের ছাদের উপরে বাগান রয়েছে।
সময়সূচি : গ্রীষ্মকালে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কেল্লা খোলা থাকে। আর শীতকালে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। রোববার পূর্ণ দিবস, সোমবার অর্ধদিবস কেল্লা বন্ধ থাকে। এছাড়া সব সরকারি ছুটির দিন লালবাগ কেল্লা বন্ধ থাকে।
প্রবেশ মূল্য : বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য প্রবেশ মূল্য ২০, সার্কভূক্ত দেশের পর্যটকদের জন্য ১০০, বিদেশি পর্যটকদের জন্য প্রবেশ মূল্য ২০০ টাকা। এছাড়া মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের জন্য প্রবেশ মূল্য ৫ টাকা।
এনএনবিডি ডেস্ক:
মন্তব্য করুন